গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে নগরীর অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এছাড়া সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতি’র সহ-সভাপতি প্রবীন কৃষক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আমজাদ হোসেন।
সম্মেলনে জেলা সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রবীণ কৃষক নেতা ও দলের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আবদুর রশিদ নিলু। নির্বাহী সমন্বয়কারী নির্বাচিত হয়েছেন আরিফুর রহমান মিরাজ। প্রধান অতিথি হিসেবে জোনায়েদ সাকি ১৯ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি পরিচয় করিয়ে দেন।
সেখানে জোনায়েদ সাকি বলেন, সারাদেশে সরকার পতনের আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে। বিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের জন্য। সংবিধান সংস্কার ও শাসন ব্যবস্থা বদলের কার্যকর আন্দোলন গড়ে উঠতে শুরু করেছে। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামকে সরকার ভয় পাচ্ছে। জনগনের সভা, সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকারকে আওয়ামী লীগ প্রতিহত করার হুমকি দিচ্ছে। তারা রাজপথে গুন্ডা বাহিনী দিয়ে ফ্যাসিবাদি কায়দায় আন্দোলন দমন করতে চায়৷ আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন তারা মিথ্যা প্রচারনাসহ নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে সরাসরি পুলিশ ও গুণ্ডা বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে জনগণের ওপর সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে চায়৷ এগুলো হচ্ছে পতনের আগ মুহুর্তের লম্ফঝম্প। এই লম্ফঝম্প বেশিদিন টিকবে না। জনগণ যখন রাজপথ দখলে নিবে, তখন এই স্বৈরাচারী শক্তি পালাতে বাধ্য হবে। আমাদের সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে৷
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি, কেন্দ্রীয় সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতির সভাপতি বাচ্চু ভুঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক-মজুর সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম, নবনির্বাচিত কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান মিরাজ, গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল সদর উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব ইয়াসমিন সুলতানা, কড়াপুর ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক নূরজাহান বেগম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি জাবের মোহাম্মদ, সহ-সভাপতি হাছিব আহমেদ প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্য দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু বলেন, সারাদেশে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বান্ধব নগীর হিসেবে বরিশালের সুনাম ছিল। কিন্তু বিগত এক দশকে বরিশালের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চলের রাজনীতি এক পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। গত কয়েক বছরে নগরীতে ট্যাক্সের নামে নানান কায়দায় জনগণের পকেট কাটা হয়েছে। বিনিময়ে নাগরিক সেবা বৃদ্ধি পায়নি। বরিশাল নগরী আজ চাঁদাবাজির নগরীতে পরিণত হয়েছে। নগরীর অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা। খালগুলো দখল হয়ে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে বরিশাল পানিতে তলিয়ে যায়। বরিশালের পরিবহন খাত সম্পূর্ণ সিন্ডিকেটের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব পরিস্থিতি থেকে জনগণ আজ মুক্তি চায়। জনগণ প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। দেশে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সর্বত্র জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমরা জনগনের পক্ষের শক্তি হয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা দীর্ঘদিন বরিশালে বিভিন্ন শ্রমজীবীসহ নানান শ্রেণী পেশার মানুষের অধিকার আদায়ে লড়াই করে যাচ্ছি। আগামীতে আমরা আরও বৃহৎ পরিসরে গণমানুষের অধিকার আদায়ে লড়াই করে যাবো।