আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

পটুয়াখালীতে আ. লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত শতাধিক


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৩ ১২:৫৮ অপরাহ্ণ পটুয়াখালীতে আ. লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত শতাধিক
Spread the love

বিএনপির ডাকা জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় পটুয়াখালী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। শনিবার সকালে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। দুপক্ষের লাঠিসোঁটার উত্তাপে গোটা শহরে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। শঙ্কা ও দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোতে দুপুর পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ চালায়।

 

জানা গেছে, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার সকাল ১০টায় শহরের বনানীতে অস্থায়ী কার্যালয়ে জনসমাবেশ শুরু করে বিএনপি। ওই জনসমাবেশে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারেফ হোসেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক চুন্নু মিয়া ও সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার, বিএনপির অন্যতম নেতা সাবেক পৌর মেয়র মোস্তাক আহমেদ পিনু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনসহ জেলা বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীরা। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ও বাজার নিয়ন্ত্রণসহ ১০ দফা দাবিতে নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুরু করলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সরকার দলীয় লোকজন তাদের ওপরে আতর্কিত হামলা শুরু করে।

 

 

এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরাও পালটা হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষে মধ্য দফায় দফায় পালটা পালটি ধাওয়া চলে। দুপক্ষের হাতে ছিল লাঠিসোঁঠা ও লোহার রড। দুই পক্ষের নিক্ষেপ করা ইটপাটকেলে সরকারি কলেজ সড়ক থেকে সিঙ্গারা পয়েন্ট পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে পরে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। ঘণ্টাব্যাপী পালটা পালটি ধাওয়া ও সংঘর্ষে গোটা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এসময় বিক্ষুব্ধরা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ টিয়ারশেল মারতে ও লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। সব ধরনের আশঙ্কা এড়াতে ঘটনাস্থলে অবস্থান করেন এসপি মো. সাইদুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল এসপি আহমাদ মাঈনুল হাসান ও সাজেদুর ইসলাম এবং র্নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান।

 

 

এ প্রসঙ্গে এসপি মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের মধ্য ধাওয়া পালটা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে জনগণের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ টিয়ারশেল ব্যবহার করেছেন এবং স্বল্প সময়ে মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 

 

এদিকে সংঘর্ষের পরে শহরের আদালতপাড়ায় হোটেল হিলটনে সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিএনপি। এতে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, এদেশে তত্ত্বাবধায়ক এবং নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন আমরা করতে দেব না। আমরা গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য জনসমাবেশের আয়োজন করেছি। এই সমাবেশে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা আতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের আহত করেছে। এসময় তিনি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পুলিশ জনগণের টাকায় বেতন পেয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে মাস্তানি করছে। আমি পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডকে ধিক্কার জানাই।

 

 

ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারেফ হোসেন বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আমরা ১০ দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে জনসমাবেশের আয়োজন করেছি। অথচ অতর্কিতভাবে সরকার দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীরা সেই শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশে হামলা চালিয়েছে। এ হামলা বিএনপির অন্তত আড়াইশ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি দশমিনা বিএনপির নেতা সেকান্দার মোল্লা, বাউফলের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খলিলুর রহমান, শামীম আহমেদ, ছাত্রদল নেতা তসলিম, মোজাম্মেল হোসেন, মিলন তালুকদার, কাজল তালুকদার, ছাত্রদল নেতা জিসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের জব্বার, সোহেল রানা, রাসেল, ওলিদ এবং সামুয়েল আহম্মেদ লেলিন আহত হয়েছেন। বাকিদের খোঁজ খবর নিচ্ছি।

 

 

অপরদিকে বিএনপির করা অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদের জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শনিবার একটি শান্তি সমাবেশের আয়োজন করি, যা পূর্বে নির্ধারিত ছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে আমরা এক হওয়ার চেষ্টা করি। এসময় আমাদের মিছিল পৌর এলাকা অতিক্রমকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় আমাদের বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। হামলার ঘটনার খবর পেয়ে আমরা সেখানে ছুটে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে আমাদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়। যে কারণে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

 

 

এদিকে বিএনপির হামলায় আহত হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন যুবলীগ নেতা রতন চন্দ্র দাস, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান আরিফ, মইন খান চানু, নাসির উদ্দিন হাওলাদার, আসাদুল হক রাহাত, আক্তারুজ্জামান সুমন, ছাত্রলীগ কর্মী কাজী রাব্বি ও মো. আরিফ ফকির। এছাড়াও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইটপাটকেলের আঘাতে সময় টিভির ক্যামেরা পার্সন সুজন দাস ও মাই টিভির প্রতিনিধি মশিউর রহমান আহত হয়েছেন।