মহাবিপদ সংকেতের মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ জেলার চার উপজেলার মানুষ ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে উত্তাল বিষখালি ও পায়রা নদীতে খেয়া পারাপার হচ্ছে। রোববার দুপুরের দিকে সরেজমিনে বরগুনার বরইতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বরইতলা-বাইনচটকি খেয়াগুলোতে কোনো রকম সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে খেয়াগুলো।
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে জেলায় ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত থাকার পরেও নাম মাত্র দুটি লাইফ জ্যাকেট নিয়ে চলাচল করছে এসব খেয়াগুলো। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে ট্রলার মাঝিসহ সাধারণ যাত্রীরা। শুক্রবার থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এর পর থেকে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল। তবে স্বাভাবিক রয়েছে খেয়া পারাপার। প্রতিবছর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বয়া ও লাইফ জ্যাকেট রাখার শর্তে খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু খেয়ার যাত্রীরা জানায়, এসব খেয়ায় যাত্রীদের জীবন রক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট ও বয়া নেই। সেই সঙ্গে খেয়া নৌকায় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার করে।
এ বিষয়ে বরইতলা-বাইনচটকি (বিষখালি নদী) ইজারাদার মো. তফিক আহমেদ পারভেজ বলেন, নদী শান্ত থাকার কারণে ও যাত্রীদের সেবার কথা বিবেচনা করে আমরা খেয়া পারাপার চালু রেখেছি। পরিস্থিতি খারাপ দেখলে পারাপার বন্ধ করব। যাত্রীদের সুরক্ষা বিষয় জানতে চাইলে বলেন, আমাদের প্রতিটির ট্রলারে লাইভ জ্যাকেট থাকা সত্ত্বেও যাত্রীরা না পরলে আমরা কী করতে পারি। বরগুনার আমতলি-পুরাকাটা (পায়রা নদী) এবং বরইতলা-বাইনচটকি (বিষখালি নদী) একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কাওছার হোসেন মোবাইলফোনে বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌরুটে সব নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। তবে এর মধ্যে খেয়া চলাচল বন্ধ কিনা সেটা আমার জানা নাই। বরগুনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) হাবিবুর রহমান বলেন, যেসব খেয়া যানে যাত্রীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে বরগুনার প্রায় ৪ লাখ মানুষের জন্য ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ২৫ মেট্রিক টন চাল, ১ হাজার কার্টন শুকনা খাবার, ৭০০ প্যাকেট বিস্কুট, ১৯০ বান টিন হাতে আছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পানের আঘাতে বরগুনার পাথরঘাটা এবং তালতলী উপজেলার সব ইউনিয়ন, বেতাগী উপজেলার এক তৃতীয়াংশ ও সদর উপজেলার বদরখালী, ৭ নম্বর ঢলুয়া, আয়লা পতাকাটা ও ফুলঝুড়ি ইউনিয়নে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বরগুনা জেলায় বেড়িবাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চলের এলাকাগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে জেলার প্রায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।