আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

সাগরে মিলছে না মাছ, তার মধ্যে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৩ ১:৪৯ অপরাহ্ণ সাগরে মিলছে না মাছ, তার মধ্যে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা
Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ একদিকে সাগরে মিলছে না মাছ, অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আতঙ্ক! এর মধ্যে আসছে সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে এতো সঙ্কটের মধ্যে সংসার কীভাবে চলবে সে নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলের জেলেদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

 

ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননের জন্য বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় ২০ মে থেকে শুরু হয়ে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। এদিকে গতকাল রাত থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত জারি করেছে। এজন্য সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সমূদ্রে না গিয়ে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে বলেছে।

 

কলাপাড়া উপকূলের জেলেরা বলছেন, রোজার মাসে সাগরে মাছ ধরা পড়েনি, ঈদের পর থেকেও তেমন বেশি মাছ পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এরই মধ্যে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় আগামী ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সব ধরনের মৎস্য আহরণ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর সমুদ্রে মৎস্য প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে সব নৌযানের ওপর সরকার এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে।আগামী ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতিবছরের মতো এ সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

এ সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারগুলো আলীপুর এবং মহিপুরের ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয়। উপক‚লের জেলেরা বর্তমানে সাগরে মাছ ধরার ব্যস্ত সময় পার করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। মহিপুর মৎস্য বন্দর জানায়, কলাপাড়া উপজেলার সমুদ্র উপক‚লীয় এলাকায় ছোট বড় প্রায় ছয় হাজার ট্রলারে লক্ষাধিক জেলে মাছ ধরায় নিয়োজিত রয়েছে। গত দুইমাস ধরে বেশিরভাগ ট্রলার বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সংকটের কারণে মাছ শিকারে কম যাচ্ছে। সৈয়দ মাঝি, আবু জাফর, হারিচ হোসেন, কালাম মাঝি নামে কয়েকজন জেলে বলেন, যুগ যুগ ধরে বাপ-দাদার দেখানো পথে মাছ ধরেই তাদের জীবন-জীবিকা চলছে। সাগরে মাছ না পেলে তাদের পরিবারে খাবার মেলে না। সামনের দিনগুলো কেমন যাবে এনিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই। তারা বলেন, অভাব-অনটনেই চলে আমাদের সংসার। সরকারি সাহায্যে তো আর পেট ভরে না। গত দুই মাসে সাগরে মাছ কম পাওয়ায় মালিকের (ট্রলার মালিক) কাছ থেকেও অগ্রিম টাকাও নিতে পারছি না আমরা।

 

এদিকে জেলে নেতা নিজাম শেখ বলেন, সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ট্রলারগুলোকে গভীর সাগরে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু উপক‚লের কাছাকাছি ছোট মাছ ধরার নৌকার ওপর কেন এই বার্তা, তা আমাদের বোধগম্য নয়। জেলেদের পরিবারের আর্থিক সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমানোর দাবি জানাচ্ছি। কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা জানান, জেলেদের প্রণোদনা বাড়ানোসহ নিষেধাজ্ঞাকালীন গভীর সাগরে প্রশাসনের টহল বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। যাতে পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা এদেশের জলসীমানায় প্রবেশ করতে না পারে। এ বছর জেলেরা তেমন বেশি মাছ শিকার করতে না পারায় আর্থিক সংকটে রয়েছেন। ফলে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারিভাবে জেলেদের পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

 

এ বিষয় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, বঙ্গোপসাগরে ইলিশের প্রজননসহ মৎস্যভাÐার সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিগত বছরের ন্যায় ৬৫ দিনে কলাপাড়া উপজেলার ১৮ হাজার ৩০৫ জন জেলের জন্য চাল বরাদ্দ থাকবে। জেলেদের তালিকা অনুযায়ী প্রথম বার জনপ্রতি ৫৬ কেজি এবং ২য় বার জনপ্রতি ৩০ কেজি করে তা বিতরণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কেউ এ সময়ে সাগরে গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও সাগর উপক‚লে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।