আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বরিশাল এটিআই অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: নভেম্বর ০৮, ২০২২ ১২:০২ অপরাহ্ণ বরিশাল এটিআই অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
Spread the love

দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে মিডটার্ম পরীক্ষা বর্জন করে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বাবুগঞ্জের কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) এর শিক্ষার্থীরা।

 

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন রহমতপুর ব্রিজ সংলগ্ন মহাসড়কে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তা‍ঁরা। এর ফলে টানা ৪ ঘন্টা বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় কয়েক হাজার বাস যাত্রীদের। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

 

এর আগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় কৃষি প্রশিক্ষক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অধ্যক্ষ ও কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা।

 

এদিকে, ঊর্ধ্বতন মহলের আশ্বাসে দুপুর ২টার পরে ক্যাম্পাসে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ আলোচনা শেষে অধ্যক্ষের অপসারণসহ সকল দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেন। তবে দাবি আদায় না হলে পুনরায় আন্দোলনে যাবার হুঁশিয়ারী দেন তাঁরা।

 

আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী তাছনিম সেতাজ, সুমাইয়া নোমান, জাবেদুর রহমান মাহি, অন্তিম, তাহিদুল ইসলামসহ অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, ‘কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ক্লাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিনা কারণে হেনস্থা করেন।শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন। তিনি ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করেন। তাঁর অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বললেই ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দেন। ছাত্রদের মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান।

 

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘প্রতি সেমিস্টারের ছাত্র কল্যাণ তহবিলের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। অথচ কোন শিক্ষার্থীর অসুবিধার জন্য ছাত্র তহবিল থেকে কিছু অর্থ সহায়তা চাইলে সহায়তা না করে উল্টো অপমাণ করেন অধ্যক্ষ। ছাত্র তহবিল, চিকিৎসা ফি ইত্যাদির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা নেওয়া হলেও ছাত্রদের জন্য সামান্যতম চিকিৎসার সরঞ্জামও দেয়া হয় না।

 

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ‘অধ্যক্ষের কারণে সবাই অতিষ্ঠ। তাই বাধ্য হয়েই আমরা শিক্ষার্থীরা আজ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের দাবি হচ্ছে, মুখ্য প্রশিক্ষক (অধ্যক্ষ) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে অপসারণ করে দ্রুত নতুন মুখ্য প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হেনস্থা ও হয়রানি বন্ধ করা, শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধামকি বন্ধ করা, অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইনস্টিটিউটের ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

 

এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. আব্দুল ওয়ারেস, সহকারী পুলিশ কমিশনার (এয়ারপোর্ট থানা) মো. মেহেদী এবং থানার অফিসার ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন।

 

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল ওয়ারেস বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি নিয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেন। পরে দাবি আদায়ের জন্য সড়ক অবরোধ করেছিল। তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে ক্যাম্পাসে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

এদিকে, সড়ক অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শিক্ষার্থী এবং ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুল হক, জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ, বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা, অতিরিক্ত পরিচালক শস্য (ক্রপ) নাসির উদ্দিন এবং উপজেলা কৃষি অফিসার মামুনুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আলোচনাকালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় বলে দাবি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা।

 

অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুঠোফোনে বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা বর্জন করে হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

 

তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেছে। তবে তারা আগে আমাকে বা অন্য কোন শিক্ষককে বিষয়টি জানাতে পারতো। আসলে এই আন্দোলনের পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে কিনা তাও বুঝতে পারছি না।