খুঁজুন
শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ২৩ কার্তিক, ১৪৩২

উত্তরায় স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্ত, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫, ৭:৫৬ অপরাহ্ণ
উত্তরায় স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্ত, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং দেশের এই শোকাবহ মুহূর্তে সংহতি প্রকাশে আগামীকাল মঙ্গলবার শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার (২১ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামীকাল মঙ্গলবার দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। আহত-নিহতদের জন্য দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানা গেছে। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে।

দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করা শুরু করে। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় দগ্ধ অন্তত ৫০ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। যারা সবাই গুরুতর দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া উত্তরা এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে আরও বহু দগ্ধ ও আহত শিক্ষার্থী ভর্তি আছে। দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কত তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে বিকেল ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। দুপুর ১টা ৬ মিনিটে এটি উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি উত্তরা মাইলস্টোন কলেজের ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটির পাইলট ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। তিনি গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শোক বার্তায় তিনি বলেন, বিমান বাহিনীর এফ-৭বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।

প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি স্থগিত:

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই প্রেক্ষাপটে স্থগিত করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল প্রধান উপদেষ্টার। তবে জাতীয় শোক পালনের কারণে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টার শোক:

রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অর্থ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

এক শোকবার্তায় ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি আমি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের এই শোক সহ্য করার শক্তি মহান আল্লাহতাআলা দান করুন।’

প্রধান বিচারপতির শোক:

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

তিনি দুর্ঘটনায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। একইসঙ্গে তিনি এই দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।

তারেক রহমানের শোক:

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি তিনি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিকেল ৩টায় এক ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান লিখেছেন, ‘মাইলস্টোন কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় আমরা শোকাহত। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- যেখানে একটি শিশু, কিশোর কিংবা তরুণ তার শিক্ষা, বিকাশ ও নিরাপত্তা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠে; সেই পরিবেশে এমন ভয়াবহতা কখনো কাম্য নয়। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’

জামায়াতে ইসলামীর শোক:

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

সোমবার এক শোক বার্তায় জামায়াত আমির বলেন, দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ওপর বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির এবং অনেক শিক্ষার্থী শাহাদাতবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এ ঘটনায় এখনো শতাধিক শিক্ষার্থী দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত।

এবি পার্টির শোক:

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।

এবি পার্টি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এর আগেও বিমান বাহিনীর বেশকিছু প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণরত কর্মকর্তাদের অনেকে নিহত হয়েছেন। এগুলো দেশের জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এ বিষয়ে বিমান বাহিনীর উচিত সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

চরমোনাই পীরের শোক:

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীর।

এক বিবৃতিতে চরমোনাই পীর বলেন, একটা স্কুলের ওপরে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ভয়াবহতা কল্পনা করে আমরা উৎকণ্ঠিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে আছি। এখন প্রাথমিক কাজ হিসেবে দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করতে হবে।

 

৩৭ জন বন্দির সাজা মওকুফ করে মুক্তি দিচ্ছে সরকার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:০৫ অপরাহ্ণ
৩৭ জন বন্দির সাজা মওকুফ করে মুক্তি দিচ্ছে সরকার

যাবজ্জীবন বা ৩০ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে রেয়াতসহ ২০ বছর বা তার বেশি সাজা ভোগ করেছেন, এমন ৩৭ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এক আদেশ (প্রজ্ঞাপন নং-১৪৩) জারি করা হয়েছে এবং আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে তা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কারা অধিদফতর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি বন্দিদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে। জেলা কারাগারগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে কারা অধিদফতর নিশ্চিত করেছে।

কারা অধিদফতর জানায়, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী এই ৩৭ জন বন্দির অবশিষ্ট সাজা মওকুফ করে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা সবাই রেয়াতসহ ২০ বছর বা তার বেশি সময় সাজা ভোগ করেছেন।

এই বিষয়ে কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, যাদের সাজা ছিল ৩০ বছর বা যাবজ্জীবন, তাদের মধ্যে যেসব বন্দি রেয়াতসহ ২০ বছর অতিক্রম করেছে, তাদের মামলা বিচারিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বয়স, আচরণ ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে সরকার তাদের অবশিষ্ট সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘এই আদেশ অনুযায়ী সর্বশেষ সিদ্ধান্তে ৩৭ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। কারও অবশিষ্ট সাজা ছিল ১০ বছর, কারও ৭ বছর বা ৬ বছর। সবগুলোই মওকুফ করাতে এবার তারা মুক্তি পাবেন।’

জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, এদের মধ্যে কোনো নারী বন্দি নেই, যদিও প্রস্তাবে নারী-পুরুষ উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই খুন (মার্ডার) মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এবং তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।

বাড়ল ২০২৬ সালের সরকারি ছুটি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
বাড়ল ২০২৬ সালের সরকারি ছুটি

২০২৬ সালে সরকারি ছুটি বেড়েছে। আগামী বছরের সরকারি ছুটির তালিকার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে এবার ছুটি কমেছে। মোট ছুটি ২৮টি। এর মধ্যে ৯ দিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় মূল ছুটি হবে ১৯ দিন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

প্রেসসচিব জানান, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকার অনুমোদন দিয়েছে। বছর নির্বাহী আদেশে এবং সাধারণ ছুটি মোট ২৮টি ছিল।

গত বছর ১৭ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫ সালের ছুটির তালিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

সেই তালিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ছুটি ছিল মোট ২৬ দিন। এর মধ্যে সাধারণ ছুটি ১২ দিন ও নির্বাহী আদেশের ছুটি ১৪ দিন। তবে সাধারণ ছুটির মধ্যে পাঁচ দিন এবং নির্বাহী আদেশের ছুটির মধ্যে চার দিনই সাপ্তাহিক ছুটি ছিল।

২০২৬ সালের সরকারি ছুটি হবে ২৮ দিন।

এর মধ্যে ছুটির সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র-শনিবার) পড়েছে ৯ দিন। সুতরাং মূল ছুটি হবে ১৯ দিন।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই একাট্টা বরিশাল বিএনপি, সরোয়ারের পক্ষে মাঠে নেতাকর্মীরা

সৈয়দ বাবু :
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ৬:২৩ অপরাহ্ণ
৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই একাট্টা বরিশাল বিএনপি, সরোয়ারের পক্ষে মাঠে নেতাকর্মীরা

নানান জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চমক দেখালেন মুজিবুর রহমান সরোয়ার। দলীয় মনোনয়ন পেয়েই ৪৮ঘন্টার মধ্যে বরিশাল বিএনপির দীর্ঘ্য বছরের অভ্যান্তরীন কোন্দল ভেঙ্গে সকল নেতাকে একই ফ্রেমে বন্দি করলেন তিনি। যার ফলে বরিশাল বিএনপিতে নতুন করে প্রাণ ফিরেছে। দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্বসংক্রান্ত কোন্দল কাটিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান সরোয়ার। তার মনোনয়নের পর বরিশাল বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন অনেকটাই শিথিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নেতৃত্ব বাছাইয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতির “বারোমিটার” খ্যাত বরিশাল মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে মুজিবুর রহমান সরোয়ার দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালী নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে তিনি নগর উন্নয়নে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন, যার মধ্যে সড়ক উন্নয়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার ও শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ ছিল উল্লেখযোগ্য।

রাজনীতির মাঠে সরোয়ার সবসময়ই সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বরিশাল সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। সেই সময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। দলের সংকটকালেও তিনি কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন, যা তার প্রতি দলের আস্থাকে আরও দৃঢ় করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে মুজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশালে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। গ্রেফতার, মামলা ও রাজনৈতিক চাপের মধ্যেও তিনি কর্মীদের মাঠে রাখার রেখেছেন। তার এই ধারাবাহিক সক্রিয়তার কারণেই কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে তার নাম নিয়ে ঐকমত্য গড়ে ওঠে। বিদ্রোহের স্থলে ঐক্যের সুরে এক হয়েছেন বাকি সব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তৃণমূলের মতে ঐক্যের কঠিন পথটি পাড়ি দেয়ার মাঝি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিগত সবকটি নির্বাচনেই – বিএনপিকে প্রতিদ্বন্দ্বি দলের চেয়ে নিজের দলের বিদ্রোহকে মোকাবেলা করতে হয়েছে বেশিরভাগ সময়। কখনও নাসিম বিশ্বাসের সাথে সরোয়ার, কখনও সরোয়ারের সাথে আহসান হাবিব কামাল বা এবায়েদুল হক চান। আর এবার ছিল পরিস্থিতি আরও সংকটজনক। বিএনপিতে মনোনয়ন চেয়ে বসলেন ৭জন।

কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের মোঃ রহমতউল্লাহ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড, আবুল কালাম শাহীন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামন ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার, যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিণ, বিএনপি নতো আলী হায়দার বাবুল। প্রথমে লিফলেট বিতরণ দিয়ে শুরু এরপর নগরীতে পোষ্টার ছেড়ে এদের অনেকে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। আর রহমতউল্লাহতো ৬ মাস আগ থেকেই সভা সমাবেশ আগের নির্বাচনে এক প্রার্থীর পিছনে অনেক নেতা ছিলেন, তারা কমিটি রেজুলেশন নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রে হাজির হতেন। নেতার পক্ষে মনোনয়ন দাবি করতেন। এবার কোন নেতা কারো পক্ষে সমর্থন দেননি। সবাই নিজের মনোনয়ন নিয়ে দৌড়ঝাপ করেছেন। কোন্দল থামাতে এবার কঠোর হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বরিশাল বিএনপির কোন্দল নিরসনে তিনি প্রথমে দায়িত্ব দেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশিদের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেন। এরপর তারেক রহমান নিজে উদ্যোগি হন। মনোনয়ন প্রত্যাসীদের কঠোর বার্তা দেন। সতর্ক করেন বিএনপি বিরোধী একাধিক শক্তির মাথাচাড়া দেয়ার বিষয়টি।

এরপরই আস্তে আস্তে কোন্দল স্তমিত হতে থাকে। প্রথমে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার ঘোষণা দেন- তিনি প্রার্থী নন। কেন্দ্র যাকে মনোণযন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবেন। অন্য সবাই ঘোষণা না দিলেও নিশ্চুপ হয়ে যান। সোমবার রাতে যখন প্রত্যাশিতভাবেই চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয় তখর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ্যাড. আবুল কালাম শাহীন, কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের মোঃ রহমতউল্লাহ সরোয়ারকে অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বিবৃতি দেন। মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকও তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে প্রেস রিলিজ দেন। জেলা ও মহানগর শ্রমিকদলও সরোয়ারের মনোনয়নকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ফলে বরিশাল বিএনপিতে যে কোন্দলের আশংকা করা হচ্ছিল তা হয়নি।

বরিশাল বিএনপি এখন মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে রয়েছে বলে স্পষ্ট হয়েছে। তৃণমূল কর্মীরা রাত থেকেই নেমে পরেছেন সরোয়ার পক্ষে। বিএনপি তেদা মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, বরিশাল-৫ আসনটি এবার অনেক গুরুত্বপুর্ন। ইসলামী আন্দোলনের মূল ঘাটি এখানে। সেই সাথে জামায়াতে ইসলামীর শক্ত প্রার্থী রয়েছে। এর ঐক্য হলে এ আসটিতে জোড় লড়াই হবে। সেক্ষেত্রে এখানে নতুন প্রার্থী দিলে আসনটি হারাতে হতে পারত। সরোয়ারই এ আসনের এজন অভিজ্ঞ এবং সর্বজন সমাদৃত প্রার্থী বলে তিনি মনে করেন। বিএনপি নেতা আনেয়ারুল হক তারিন বলেন, দীর্ঘ চারবারের সংসদ সদস্য, মেয়র, জেলামন্ত্রী হিসবে সরোয়ারের নিজশ্ব একটা বড সমর্থক গোষ্টি আছে। এর সাথে যদি জেলা ও মহানগর বিএনপি নিঃস্বার্থভাবে সরোয়ারের পাশে থাকে তবে বিএনপির জয় এবারও নিশ্চিত। দলীয় নেতারা বলছেন, সরোয়ারের নেতৃত্বে এখন বরিশাল বিএনপি নতুন উদ্যমে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনী সভা, কর্মী বৈঠক ও যোগাযোগ জোরদারের কাজ শুরু হয়েছে। একজন তৃণমূল নেতা বলেন, “সরোয়ার ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা আবার সংগঠিত হচ্ছি। অনেকদিন পর বরিশালে বিএনপির মধ্যে ঐক্যের সুর বেজেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে বরিশালের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিক অবস্থান ও ভোটার কাঠামোর কারণে বরিশালকে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতির “বারোমিটার” বলা হয়। এখানকার ভোটের প্রবণতা প্রায়ই আশপাশের জেলা ও পুরো অঞ্চলের নির্বাচনী হাওয়াকে প্রভাবিত করে। ঐতিহাসিকভাবে বরিশাল বিএনপির একটি শক্ত ঘাঁটি ছিল। ফলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বরিশালের ফলাফলকে রাজনৈতিক দলগুলো কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মুজিবুর রহমান সরোয়ার একজন অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে বরিশাল বিএনপিকে পুনরায় মাঠে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।

তবে স্থানীয় নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ বিরোধ সম্পূর্ণ মিটিয়ে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এখন তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।