দুর্বিষহ হয়ে উছেঠে বরিশাল সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ । ৯:৫০ অপরাহ্ণ

এইচ এম সোহেল ॥ বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারন করেছে। সাথে বিষ ফোড়াঁ হয়ে উঠেছে হাসপাতালের অভ্যতরীন রোগ নির্নয় কেন্দ্রটি। তথ্য মতে, বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা গ্রহন করে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে সাতশত রোগী এবং হাসপাতালে ভর্তি থাকে প্রায় সাড়ে চারশত রোগী। তবে এতো সংখ্যক রোগীর জন্য চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ২৪ জন। একদিকে চিকিৎসক সংকট অপরদিকে হাসপাতালের অভ্যতরীন রোগ নির্নয় কেন্দ্রটিতে পর্যাপ্ত সেবা না দিতে পারায় হাসপাতালের অভ্যান্তরে বেড়েই চলেছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের দৌরাত্ম। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের অভিযানে দালালদের আটক করা হলেও চিত্র বদলায় না এ হাসপাতালের। ফলে প্রতিধিনই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দুরদুরান্ত থেকে আসা সাধারন রোগীদের।

হাসপাতালে রোগ নির্নয় কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরিমাণ যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলোর অর্ধেকই নষ্ট বা অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিদিন। একধিক রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা নির্ধারিত সময়ে আসলেও অনেকেই সময় দেন না। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রোগীদের পাঠানো হয় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ওষুধের অভাবের অজুহাতে প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে সাধারণ মানুষকে দৌড়াতে হচ্ছে বাহিরের ফার্মেসিতে। জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমানে ৩৪জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৪ জন। এর মধ্যে বেশিরভাগই ইন্টার্ন বা প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক। নার্স ও অন্যান্য সহায়ক কর্মীর সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রোগী রহিমা বেগম বলেন, আমি সকালে ভর্তি হই, বিকেল পর্যন্ত কোনো ডাক্তার দেখতে আসেননি। নার্সদের ডাকলে বলে ডাক্তার ব্যস্ত আছেন। হাসপাতালের এক সিনিয়র নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা চেষ্টা করি রোগীদের সেবা দিতে, কিন্তু জনবল কম, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির অভাব বড় বাধা। এ ছাড়াও বরিশাল জেনারেল সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে তিনশত রোগী ভর্তি থাকে। এসকল রোগীতের রোগ নির্ণয়ের জন্য নানান পরিক্ষা নিরিক্ষা করাতে হয়। তবে হাসপাতালে সকল পরিক্ষার ব্যবস্থা না থাকার কারনে রোগীদের যেতে হয় বাহিরের ডায়াগস্টিক সেন্টারে। হাসপাতালের ল্যাবের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক রোগী পরীক্ষা করতে আসে। কিন্তু বায়োকেমিস্ট্রি ও হরমোন পরীক্ষার মেশিন প্রায়ই বিকল থাকে। টেকনিশিয়ানও কম। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে দালালদের হাতে নিজেদের সপে দিতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ল্যাবে টেকনোলজিস্ট সংকট রয়েছে। যেখানে প্রয়োজন অন্তত ছয়জন টেকনোলজিস্ট। এছাড়া বেশ কয়েকটি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট ও কেমিক্যালেরও ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট আছে, তবে আমরা পর্যাপ্ত সেবা দিতে সচেষ্ট। নষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামতের প্রক্রিয়া চলছে, এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে নতুন সরঞ্জাম চাওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজন রোগী-চিকিৎসক যোগাযোগ বৃদ্ধি, সেবাকর্মীদের প্রশিক্ষণ, এবং হাসপাতাল পরিচালনায় জবাবদিহিতা। প্রতিদিন শত শত রোগী সেবা নিতে আসে এই হাসপাতালে, কিন্তু তাদের অভিযোগ একটাই ডাক্তার আছেন, সেবা নেই। নাগরিকদের প্রত্যাশা স্বাস্থ্যসেবার নামে ভোগান্তি নয়, বরং প্রকৃত সেবার নিশ্চয়তা দিক প্রশাসন।

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন