এইচ এম সোহেল ॥ ঐতিহাসিক দুর্গা সাগর দীঘি যা স্থানীয়ভাবে মাধবপাশা দিঘি নামেও পরিচিত। দীঘিটির মোট আয়তন প্রায় ৬২ একর যে কারনে এটি দক্ষিণ বাংলার বৃহত্তম হ্রদ। বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশায় অবস্থিত দুর্গাসাগর দীঘি একটি অনন্য পর্যটন স্থান হিসেবে পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বরিশাল জেলা শহর থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে এই বিশাল দিঘি ১৭৮০ সালে খনন করা হয়। রাজা জয়নারায়ণের মা দুর্গাদেবীর নামানুসারে দুর্গাসাগর দিঘির নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কর্তৃক চিহ্নিত বাংলাদেশের দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলোর তালিকায় সগৌরবে স্থান পেয়েছে এই দুর্গাসাগর দিঘি ।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (সরকারি পর্যটন সংস্থা) ২০১৮-২০২৫ অর্থবছরে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় দিঘির পাড়ে রেস্ট হাউস, পিকনিক স্পট, গেট, দু’টি সেলফি কর্নার, একটি গোল চত্ত্বর সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সাথে দুর্গাপসাগর দিঘিকে সম্পূর্ণ নতুন সীমানা প্রাচীর এর ভিতর নেওয়া এবং ১.৬ কিলোমিটার হাটার রাস্তা টাইলস করা হয়েছে। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের খেলার জন্য একটি মিনি শিশু পার্ক ও দর্শনার্থীদের উপভোগের জন্য ছয়টি প্যাডেল বোট চালু করা হয়েছে। যার কাজ ২০২৫ সালে সম্পূর্ন হয়েছে।

দুর্গাসাগর দীঘির নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আজকের বার্তাকে বলেন, দুর্গাসাগর দীঘিতে আমাদের ১৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ১৬টি স্টোর বরাদ্দ ও গেস্ট হাউস চালুর কাজ চলছে। আশা করছি, এগুলো চালু হলে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। এরপর আমরা নতুন প্রকল্প নিয়ে এগোবো।
প্রতিদিন শত শত স্থানীয় এবং আঞ্চলিক পর্যটকরা অনন্য সবুজ, নির্মলতা উপভোগ করতে এবং সেখানে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে বেড়াতে যান। পাখির কিচিরমিচিরের ধ্বনি দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্লান্ত পর্যটকদের শান্ত করে। যদিও পর্যটকদের জন্য শীত, বসন্ত এবং হেমন্ত এই স্থানটি দেখার উপযুক্ত সময়। তবুও দিঘির পাড়ের নির্জন পরিবেশ বছরের অন্যান্য মৌসুমেও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। বিশেষ করে শীতের মৌসুমে দিঘিতে সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, হরিয়াল, দুর্গা, এবং বিভিন্ন ধরনের হাঁস জাতীয় পাখির দেখা মিলে। এই পাখিগুলো মূলত সাইবেরিয়া, উত্তর ইউরোপ, মঙ্গোলিয়া এবং সুমেরুর মতো ঠান্ডা অঞ্চল থেকে আসে, যেখানে শীতকালে জীবনধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বছরের শুরুতে সারাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার দশর্নার্থী আসেন দুর্গা সাগর দীঘিতে।

সরেজমিনে জানা যায়, এই দিঘি খননের পেছনে একটি কল্পকাহিনী রয়েছে যে, রাজা জয়নারায়ণের মা দুর্গাদেবীর নামানুসারে দুর্গা সাগর দিঘির নামকরণ করা হয়। দুর্গাদেবী তার প্রজাদের প্রতি অত্যন্ত সদয় ছিলেন। তিনি তার প্রজাদের সুপেয় পানির অভাব থেকে মুক্তি দিতে এই দিঘি খননের নির্দেশনা দেন। দুর্গাদেবী যতদূর হেঁটে হেঁটে যেতে পারেন, পুকুরটিও ততদূর খনন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দিঘির মাঝখানে একটি ছোট দ্বীপ তৈরি করা হয়। বর্তমানে দ্বীপটির সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রোপন করা হয়েছে বাহারি রঙের ফুল গাছ।
দুর্গা সাগর দীঘিতে সময় কাটাতে আসা দশর্নার্থী এবং স্থানীয়দের মতে, বরিশাল জেলায় এরকম দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা খুবই কম। তাই যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন এবং সৌন্দর্য বর্ধন জায়গাটিকে আরও আকর্ষনীয় করবে।
দুর্গাসাগর দীঘির নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আজকের বার্তাকে বলেন, দুর্গাসাগর দীঘিতে আমাদের ১৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ১৬টি স্টোর বরাদ্দ ও গেস্ট হাউস চালুর কাজ চলছে। আশা করছি, এগুলো চালু হলে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। এরপর আমরা নতুন প্রকল্প নিয়ে এগোবো।


অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ । ৯:৪৮ অপরাহ্ণ