৬৫ কোটিতেও প্রাণ ফিরছে না বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়ামের

সৈয়দ বাবু ॥
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ । ৬:০৭ অপরাহ্ণ

বরিশালের ক্রীড়া প্রেমীদের দীর্ঘদিনের গর্ব ছিল বিভাগীয় কবি জীবনানন্দ দাশ স্টেডিয়ামটি। একসময় এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ও যুব ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। কিন্তু বর্তমানে মাঠের চিত্র একেবারে উল্টো। মাঠে গর্ত, ভাঙা গ্যালারি, অকেজো ফ্লাডলাইট আর নষ্ট স্কোরবোর্ড। নির্মানের পর থেকে বড় কোন খেলার আসর বসেনি এ স্টেডিয়ামটিতে। ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ বনাম শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ চারদিনীয় ম্যাচে অনুষ্ঠিত হয়। এ ম্যাচের মাধ্যমে স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পা রাখে (অনুর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক)।

তথ্য মতে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়াম উন্নয়নে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। এর আওতায় মাঠ সংস্কার, গ্যালারি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ড্রেসিংরুম, ইনডোর জিমনেশিয়াম ও নতুন টাওয়ার স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর কয়েকটি ধাপে থেমে যায়। এর পরে সর্বশেষ ২০২৪ সালের মে মাসে পুনরায় ঘোষণা আসে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ৬০ কোটি টাকায় স্টেডিয়ামের ইনডোর ও আউটডোর সুবিধা আধুনিকীকরণ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এখনো অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে ধীর গতিতে। বরিশাল ক্রিড়া সংস্থার দাবী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়াম উন্নয়নের জন্য যে সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে মেসার্স কহিনুর নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ অত্যন্ত ধীর গতির হওয়ায় আগামী বিপিএলের আসর বরিশাল স্টেডিয়ামে বসবে কিনা তা নিয়ে শংঙ্কায় আছে।

১৯৬৬ সালে নগরীর বান্দ রোড সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই স্টেডিয়ামটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া অবকাঠামো। প্রায় ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মাঠে আছে দুইটি ড্রেসিং রুম, প্রেস বক্স, প্রশাসনিক ভবন ও নিরাপত্তা ফটক। ২০০৬ সালে এটি প্রথম আধুনিকায়ন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নতুন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকারি নথি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে প্রায় ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মাঠের গ্যালারি, ভবন ও পিচ সংস্কার করা হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৫ কোটি টাকার ইনডোর ও আউটডোর উন্নয়ন প্রকল্প যুক্ত হয়। সর্বমোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ কোটি টাকার মতো, তবে মাঠের অবস্থা এখনো মানহীন।

বরিশাল জেলা ক্রিড়া কর্মকর্তা ও বরিশাল জেলা ক্রিড়া সংস্থার সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম শুভ বলেন, এত টাকা ব্যয় হলেও মাঠের আউটফিল্ডে এখনো পানি জমে থাকে। ফ্লাডলাইটের কাজ অসম্পূর্ণ, টয়লেট ও পানীয় জলের অভাব, দর্শকদের ভোগান্তি। প্রতিটি কাজে ধীরগতি ও পরিকল্পনার ঘাটতি আছে। বরিশাল জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, “ফুটবল ফেডারেশন বরিশাল কয়েকবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ আয়োজনের আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু মাঠের মান না থাকায় তারা সরে গেছে। এটা আমাদের জন্য বড় হতাশা।

পিচ ও আউটফিল্ড জাতীয় মানের নিচে। পিচের বলের বাউন্স অনিয়মিত, আর ড্রেনেজে সমস্যা থাকায় বর্ষাকালে মাঠ অচল হয়ে যায়। এই অবস্থায় জাতীয় পর্যায়ের খেলা আয়োজন সম্ভব নয় বলে অভিযোগ করেন বরিশালের কয়েকজন ক্রিকেটার। তারা আরও বলেন, ফ্লাডলাইট, ড্রেনেজ ও ঘাসের মান ঠিক না করলে বিসিবি কোনো বড় ম্যাচ এখানে আয়োজন করবে না। স্থানীয় ফুটবল খেলোয়াড় সোহান রহমান বলেন, আমরা অনুশীলনে যাই, কিন্তু মাঠে পানি জমে থাকে। কখনো কখনো বল কাদা মাটিতে আটকে যায়। এটা খেলোয়াড়দের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

নিয়মিত খেলা দেখতে আসা দর্শক নাসির উদ্দিন বলেন, গ্যালারি ভাঙা, টয়লেট অপরিষ্কার হওয়ার কারনে পরিবার নিয়ে মাঠে আসার মতো পরিবেশ নেই। অথচ এটি বরিশালের গর্ব হতে পারত। বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়াম দক্ষিণাঞ্চলের ক্রীড়া উন্নয়নের প্রতীক হতে পারত। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে অনিয়ম, ধীরগতি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই মাঠ এখন পরিত্যক্ত প্রায়।

৬৫ কোটি টাকার কাজ শেষ হলেও মাঠ প্রাণ ফিরে পাবে কিনা? এটাই এখন বরিশালের ক্রীড়াপ্রেমীদের বড় আক্ষেপ।

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন