-
# ২১ আসনেই মনোনয়ন যুদ্ধ
-
# বিএনপিতে বিভাজন-গ্রুপিং
-
# সক্রিয় জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন সরগরম। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, এবং বিকল্প রাজনৈতিক জোটের তৎপরতায় দক্ষিণাঞ্চলের এই অঞ্চলজুড়ে তৈরি হয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রতিযোগীতা আরো তীব্র হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনে মনোনয়ন প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্রতিটি আসনেই দেখা যাচ্ছে তীব্র প্রতিযোগিতা।
একটি আসনে চার থেকে পাঁচজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ২১টি আসনের বিপরিতে বিএনপির প্রায় সাড়ে ৩শ’ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। যেটা দলের জন্য অনেকটা সমস্যার সৃষ্টি করছে। ভোটারদের মনেও বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল-৩ আসনে হেভিওয়েট দুই নেতা সেলিনা রহমান ও জয়নুল আবেদীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন আলোচনার কেন্দ্রে। এদিকে বরিশালের ৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের সাথে আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় রাজধানীর গুলশানের কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানা গেছে, বরিশালের ২০টি আসন থেকে এবার ডাকা হয়েছে মোট ৬০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীকে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠক শেষে দক্ষিণাঞ্চলের আসনগুলোতে মনোনয়নের সবুজ সংকেত দেওয়া শুরু হবে চলতি মাসের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে। দলের সূত্র জানায়, এ বৈঠকে উপস্থিত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আন্দোলনে ভূমিকা, সাংগঠনিক অবস্থান ও জনপ্রিয়তা যাচাই করে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল-৫ (সদর) থেকে যাচ্ছেন মজিবর রহমান সরোয়ার, আবু নাসের রহমতউল্লাহ, এবায়েদুল হক চাঁন ও মনিরুজ্জামান ফারুক। বরিশাল মহানগর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, “মনোনীত প্রার্থী ঘোষণার পর সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন, তবে আপাতত প্রতিটি গ্রুপ নিজ নিজ অবস্থান শক্ত করছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাটাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। ইতোমধ্যে তারা একটি বৈঠকও করেছেন। বরিশাল মহানগর বিএনপিতে বিভাজন ও গ্রুপিং দীর্ঘদিনের। অনেক সময় একেক গ্রুপ আলাদা কর্মসূচি পালন করে, ফলে মাঠপর্যায়ে ঐক্যহীনতা স্পষ্ট হয়। সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মহানগর বিএনপির নেতাদের আহ্বান জানানো হয় যে, দলীয় স্বার্থে অভ্যন্তরীণ বিভেদ ভুলে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন শিকদার বলেন, বরিশালের বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে আছে। আমাদের লক্ষ্য একটাই দলের আদর্শ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে সফল করা। কিছু অভ্যন্তরীণ মতভেদ ছিল, কিন্তু আমরা তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলেছি। এখন বরিশালের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই একই লক্ষ্যে কাজ করছে। জনগণ এখন পরিবর্তন চায়, বিএনপি সেই জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবেই মাঠে থাকবে। অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামী একক ভাবে বরিশাল রাজনীতির একটি বড় অংশ জুড়ে দখল করে রয়েছে। একই সাথে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল বরিশালের নির্বাচনী রাজনীতিতে শক্তিশালী ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় সব আসনেই এসব দল প্রার্থীও চূড়ান্ত করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই দলগুলোর তৎপরতা মূলধারার দলগুলোর ভোট সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। “বরিশালে ইসলামী রাজনীতির উপস্থিতি বিএনপির ভোটভাগে প্রভাব ফেলতে পারে, আবার কিছু আসনে ভোট সমন্বয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে” বলে দাবী স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
এ বিষয়ে বাংলদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সহকারী সেক্রেটাররি ও বরিশাল ৫ আসনের জামায়াতে ইসলামীর এমপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেন, “আমরা ন্যায়ের রাজনীতি করতে চাই, ক্ষমতার রাজনীতি নয়। বরিশালের মানুষ আজ পরিবর্তন চায় তারা সৎ, নীতিবান নেতৃত্বের অপেক্ষায় আছে। জনগণের পাশে থেকে আমি সবসময় কাজ করেছি, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও করব। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি সমাজ গঠন করা যেখানে ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে। ভোট যদি সুষ্ঠ হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ বরিশালের মানুষ আমাদের সাথেই থাকবে। এদিকে, নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান (সিইসি) ও স্থানীয় কর্মকর্তারা সম্প্রতি বরিশালে এক বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতি, প্রশাসনিক দায়িত্ব বণ্টন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগাম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিক সমাজও সামাজিক ইস্যুতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-জনতা বরিশালে বিক্ষোভ করেছে। এই ধরনের আন্দোলন এখন রাজনৈতিক আলোচনার অংশ হয়ে উঠছে, যা নির্বাচনী প্রচারণাতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সব মিলিয়ে বরিশালের রাজনীতিতে এখন উপরোক্ত এই তিনটি স্পষ্ট প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব উপাদান মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতি এখন আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। আগামী নির্বাচনে এখানকার ফলাফল রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সৈয়দ বাবু
প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ । ৬:০৬ অপরাহ্ণ