রুশ তেল কোম্পানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ । ৬:১৫ অপরাহ্ণ

বিশ্ববাজারে আজ বৃহস্পতিবার তেলের দাম একলাফে প্রায় ২ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এক দিন আগেই রাশিয়ার দুটি প্রধান জ্বালানি তেল কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিষেধাজ্ঞার জেরে সরবরাহ–সংক্রান্ত উদ্বেগ থেকে তেলের দাম বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে রাশিয়া গড়িমসি করছে, এমন অভিযোগ এনে গতকাল বুধবার রাশিয়ার প্রধান তেল কোম্পানি রোসনেফট ও লুকঅয়েলকে নিশানা করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ। এরপর আজ জিএমটি ৩টা ৩ মিনিট পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৩ মিনিট) প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১ দশমিক ৫৬ ডলার বা ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়ে ৬৪ দশমিক ১৫ ডলারে পৌঁছায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ১ দশমিক ৫৩ ডলার বা ২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে ৬০ দশমিক শূন্য ৩ ডলারে পৌঁছায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি নিষিদ্ধও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মস্কোকে অবিলম্বে ইউক্রেনে একটি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আরও বলেছে, তারা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত আছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের চাপ সত্ত্বেও কয়েক মাস ধরে রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা থেকে বিরত থেকেছেন। ট্রাম্প আশা করেছিলেন, আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করতে রাজি হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হওয়া নিয়ে কোনো আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়নি। ট্রাম্প বলেন, মনে হচ্ছে এটা করার  সময় হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য রোসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি নিষিদ্ধও অন্তর্ভুক্ত আছে। ফিলিপ নোভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সাচদেবা বলেন, ‘রাশিয়ার প্রধান তেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য স্পষ্টভাবে ক্রেমলিনের যুদ্ধের অর্থের জোগান বন্ধ করা। এ পদক্ষেপ রাশিয়ার তেলের বাস্তব সরবরাহকে সংকীর্ণ করবে এবং চাহিদা পূরণের জন্য তেলের অন্য বাজারের দিকে ক্রেতাদের যেতে বাধ্য করবে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে যদি দিল্লি রাশিয়ার তেল কেনা কমায়, তবে এশিয়ার দেশগুলো তেলের চাহিদা পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দিকে ঘুরবে বলেও মনে করেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, এতে আটলান্টিকের বাজারে তেলের দাম বাড়বে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনকারী কোম্পানিগুলো বলেছে, তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করছে। তারা এটা নিশ্চিত করতে চায় যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রোসনেফট ও লুকঅয়েল থেকে যেন সরাসরি কোনো সরবরাহ না আসে। তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে সত্যিই বাজারে তেল সরবরাহের মূল কাঠামোয় পরিবর্তন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। জ্বালানি গবেষণা ও পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠান রিস্টাড এনার্জির পরিচালক (গ্লোবাল মার্কেট বিশ্লেষণ বিভাগ) ক্লদিও গালিমবারতি বলেন, ‘নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে, তবে আমি তেলের দামের এ উল্লম্ফনকে বাজারের তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছি, কোনো কাঠামোগত পরিবর্তন হিসেবে নয়। গালিমবারতি আরও বলেন, ‘গত সাড়ে তিন বছরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত প্রায় সব নিষেধাজ্ঞাই দেশটির তেল উৎপাদন বা আয়, কোনোটির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারত ও চীনের ক্রেতারা এখনো রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে স্বল্প মেয়াদে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত শিথিল করায় ওপেকপ্লাস জোটের সরবরাহ বৃদ্ধিকে বাজারের সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারক উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে। গালিমবারতি বলেন, মাস শেষ হতে চলেছে। আগামী মাসে যাওয়ার পথে তেলের বাজারে যে তিনটি বিষয়ের দিকে তিনি গভীর নজর রাখবেন, সেগুলো হলো ওপেকপ্লাস দেশগুলোর উৎপাদন শিথিলকরণ, চীনের তেল মজুত বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধ।

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন