ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার ভেতর নিয়ম করে বসছে অবৈধ ইলিশের হাট। এসব হাটে অপরিচিত কোনো ব্যক্তির উপস্থিতিতে ইলিশ বিক্রি হয় না। জেলেদের নির্দিষ্ট দালাল ও ক্রেতার মধ্যেই চলছে এমন বেচাকেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মা ইলিশ সংরক্ষণে সাগর ও নদ-নদীতে মাছ শিকারের ওপর সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গলাচিপায় অন্তত ১০টি স্থানে বসছে ইলিশের হাট।
চরকাজলের সাইদুল মিয়া বলেন, ‘চরকাজলের নোমোর স্লুইসগেট এলাকায় প্রতিদিনই ইলিশ মাছ ধরা হয়। নির্ধারিত দালালের কাছে ফোনে অর্ডার করলেই বাড়ি পৌঁছে যায় ইলিশ মাছ। তবে অপরিচিত কারো কাছে মাছ বিক্রি করা হয় না।’ সরেজমিনে পানপট্টি লঞ্চঘাট ও বন্যাতলী নদীতে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করছেন।
প্রশাসনের ট্রলার দেখলেই তারা নিমেষেই বন বিভাগের বনের ভেতর লুকিয়ে পড়েন। ফলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া চরবাংলা, নোমোর স্লুইসগেট, চরকাজল লঞ্চঘাট, চরআগস্তিসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযানের সময় জেলেরা প্রশাসনের ট্রলারকে উল্টো ধাওয়া দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। গলাচিপা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর থেকে থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত দেড় লাখ মিটার ইলিশ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে দেয়।
এসব জালের বাজার মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ইলিশ শিকারের অভিযোগে তিনটি মাছ ধরার ট্রলার জব্দ ও সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
গলাচিপার পানপট্টি ইলিশ বিক্রেতা রিয়াদ হোসেন বলেন, পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকার ইলিশের বাজার ও আড়ত গত ৪ তারিখ থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে এখানে কোনো ইলিশ বিক্রি হয় না। এমনকি পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকার কোনো জেলে অবৈধভাবে ইলিশ শিকারে জড়িত নেই।
তবে আশপাশের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে। এদিকে গলাচিপার চরবিশ্বাস, জিমতলা, নোমোর স্লুইসগেট, চরবাংলা, চরকাজল, বদনাতলী, চরকারফারমাসহ বিভিন্ন স্থানে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত এজেন্টের মাধ্যমে। প্রভাবশালী এসব এজেন্টের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায় না। এমনকি যেখানে অবৈধভাবে ইলিশ মাছ বিক্রি করা হয়, সেখানে কেউ মোবাইল নিয়েও যেতে পারে না।
পানপট্টি এলাকার ইলিশ জেলে ইউসুফ বলেন, ‘চলমান অবরোধ যদি আরো ১৫ দিন পর শুরু হতো, তাহলে হয়তো এ অবরোধ কার্যকর হতো।’ তিনি বলেন, ‘সাগরে যারা মাছ ধরেন, তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারে যান না। স্থানীয় ছোট জেলেরা বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে মাছ ধরেন।’
এ ব্যাপারে গলাচিপা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহিরুন্নবী বলেন, ‘অধিকাংশ জেলে আইন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ইলিশ শিকারে নদীতে নামছে। প্রশাসনের একাধিক টিম অভিযান চালিয়েও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছে না।’
জহিরুন্নবী বলেন, ‘ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ২২ দিনের বিশেষ অভিযান চলমান। এসময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুদ নিষিদ্ধ। আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি। তবে লোকবল ও যান সংকটের কারণে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫ । ৬:২৫ অপরাহ্ণ