চালের অপেক্ষায় নদীর তীরে মান্তা সম্প্রদায়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ । ৭:৩০ অপরাহ্ণ

বরাদ্দকৃত চালের দাবিতে বরিশালের মুলাদী উপজেলা জয়ন্তী ও আড়িয়াল খাঁ নদের তীরের মান্তা সম্প্রদায়ের অর্ধশত মানুষ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

মান্তারা তালিকাভুক্ত জেলে। কিন্তু বরাদ্দ কম হওয়ায় ৮২টি পরিবারের মধ্যে মাত্র ২৫টি পরিবারই চাল পেয়েছেন। মাছ শিকার একমাত্র তাদের জীবিকা নির্বাহ অবলম্বন।

কিন্তু মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পরিবারগুলো খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, নদী ও উপকূল ভাঙনের শিকার মান্তাদের স্থায়ী ‘পাড়’ নেই। প্রতিদিনই তারা জীবনের অনিশ্চয়তার ঢেউয়ে ভেসে চলেন। দেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে নদী ও মোহনার তীরে গেলে চোখে পড়বে সারি সারি নৌকা।

প্রতিটি নৌকায় তাদের একটি পরিবার। জীবনের সব দুঃখ, হাসি, কান্না একরত্তি নৌকায় মিলেমিশে আছে। নৌকার মাঝখানে ঘুম, পেছনে রান্না-বান্না, সামনের অংশে কাজকর্ম। বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় তারা বাস করেন।

খরা মৌসুমে পানিকে অনুসরণ করে, বর্ষায় আগের ডেরায় ফিরে আসেন। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবারে নারী-পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে এদের সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি।

মুলাদীর মান্তা সম্প্রদায়ের জরিনা বেগম জয়ন্তী নদীতেই বসবাস করেন। তার জীবনযাত্রার একমাত্র মাধ্যম জাল। মা ইলিশ শিকার নিষেধাজ্ঞার সময়ে নদীতে জাল ফেলা নিষিদ্ধ।

সরকারের দেওয়া প্রণোদনা তাদের একমাত্র ভরসা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জরিনা মৎস্য অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। জরিনা বেগম বলেন, ‘আমরা যারা নদী থেকে জীবনধারণ করি, তাদের তালিকাভুক্ত থাকা সত্ত্বেও চাল পাইনি। সাত ঘণ্টা অপেক্ষার পরও আমাদের নাম নেই। অথচ যাদের চাল দেওয়া হয়েছে, অনেকেরই মৎস্যজীবী কার্ড নেই।’

মান্তা সম্প্রদায়ের আরেক সদস্য সোহেল সরদার বলেন, ‘এই সময়ে নদীতে নামা যায় না। প্রণোদনা না পেলে অনেক পরিবার খালি পেটে থাকবে। মাছ ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। নৌকাই আমাদের সংসার। নৌকায় জন্ম, আমাদের নৌকায় মৃত্যু। আমরা সারাজীবন নৌকায় থাকি। এই নদীতে মাছ শিকার করি।’

মুলাদী উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আবুল বশার বলেন, ‘উপজেলার সফিপুর, খেজুড়তলা, মুলাদী সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার রাস্তার মাথায় ৮২টি মান্তা পরিবার রয়েছে। নৌকায় তাদের বসবাস। সারা বছর মাছ শিকার করে তাদের সংসার চলে। বরাদ্দ কম হওয়ায় মাত্র ২৫ পরিবারকে চাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বঞ্চিতদের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন জানান, নতুন তালিকা তৈরির সময় কিছু জেলে বাদ পড়েছেন। মান্তা সম্প্রদায়ের বিষয়টি আগে জানা ছিল না। তবে তদন্ত করে প্রকৃত জেলেদের তালিকাভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে চার লাখ ৪৭ হাজার জেলে থেকে তিন লাখ ৪০ হাজার জেলে প্রণোদনার সুবিধা পাবেন। এক লাখের বেশি জেলে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

 

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন