বরগুনার ১৬ শিক্ষক-কর্মচারীর মাদ্রাসায় ১৫ শিক্ষার্থী

আমতলী প্রতিনিধি :
প্রকাশের সময়: বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ । ৬:৫৮ অপরাহ্ণ

বরগুনার আমতলী উপজেলার উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বিপরীতে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এই ১৫ জন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকার বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসা কমিটি, শিক্ষক ও স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামে উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে চলছে। দীর্ঘদিনের কমিটি-শিক্ষক ও স্থানীয়দের দ্বন্দ্ব, কমিটির অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং নানা অনিয়মের কারণে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। গত বছর ওই মাদ্রাসা থেকে ৩৭ জন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলেও পাশ করেছে মাত্র ৭ জন। ২০২৬ সালে দাখিল পরীক্ষায় ৩৬ জন অংশ গ্রহণের কথা থাকলেও মাদ্রাসায় আসছে মাত্র দুইজন। এছাড়া ইবতেদায়ী শাখায় শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। কাগজে কলমে মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী শাখাসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র ১৫ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ২০-২৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী কোন সময়ই উপস্থিত হয় না। তারা অভিযোগ করেন, আগের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল তার ভাইকে আব্দুল জলিলকে নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ দিয়েছেন এবং আব্দুল জলিল শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ও শিক্ষকদের চেয়ারে বসে থাকেন, যেন তিনিই শিক্ষক।

মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টায় মাদ্রাসায় চারটি শ্রেণীকক্ষে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী পাঠদান করছে। এর মধ্যে দশম শ্রেণীতে ২ জন, নবম শ্রেণীতে দুইজন এবং অন্য দুই ক্লাসে ১১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। নৈশ প্রহরী আব্দুল জলিল মাদ্রাসায় এসে শিক্ষকদের চেয়ারে বসে আছেন। সুপার (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান কবির মাদ্রাসায় আসেননি। তিনি দাফতরিক কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেলেও, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি মাসের অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন এবং মাঝে মাঝে এসে খাতায় স্বাক্ষর করেন।

মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা ফারুক হোসেন বৃষ্টির কারণে শিক্ষার্থী কম আসার দাবি করে বলেন, “বৃষ্টি ছাড়া বেশি শিক্ষার্থী আসে।” তিনি মাদ্রাসায় কোনো অনিয়ম নেই বলেও দাবি করেন।

তবে মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাওলানা আব্দুল হাই বলেন, “অনিয়মের ভরপুর ওই মাদ্রাসা। সুপার (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান কবির ভুয়া নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সে সব সময় ঢাকায় থাকেন। মাসে দুইএকবার মাদ্রাসায় এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যায়। যত অনিয়মের মূলে ভারপ্রাপ্ত সুপার কামরুজ্জামান কবির।”

মাদ্রাসা সুপার মো. কামরুজ্জামান কবির অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, “আমি দাফতরিক কাজে ঢাকায় আছি। বর্ষার মৌসুমে শিক্ষার্থী কিছুটা কম আসে।” তিনি আরও বলেন, “এলাকায় পরপর তিনটি মাদ্রাসা থাকার কারণে শিক্ষার্থী কিছুটা কম।”

আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াদ হাসান বলেন, “মাদ্রাসার অনিয়মের বিষয়ে আমি জেনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, “১৫ জন শিক্ষার্থী দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন