মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করতে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকা এবং বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় শুরু হয়েছে ২২ দিনের মাছ ধরার সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ভোলার দুই লক্ষাধিক জেলে। ফলে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ ও সংসার চালানো নিয়ে তারা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
ভোলা জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৭টি উপজেলা- ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরায় সরকারি ভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮৩ জন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৮ জন জেলের জন্য ২৫ কেজি করে মোট ৩ হাজার ৫৮৫ দশমিক ৯৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বরাদ্দ না থাকায় ২৬ হাজার ৮৪৫ জন নিবন্ধিত জেলে সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবেন।
সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া তুলাতুলি, ভোলার খাল, নাছির মাঝি ও দৌলতখানের মেদুয়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা মেনে শতভাগ জেলে ও ট্রলার মালিকেরা তাদের জাল ও ট্রলার তীরে তুলে রেখেছেন। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক জেলে আগেই ট্রলার নিয়ে ফিরে এসে সরঞ্জামাদি পরিষ্কার করছেন। গত কয়েক মাস নদীতে ইলিশ কম থাকলেও সম্প্রতি কিছুটা ইলিশ ধরা পড়ছিল। এসময়েই মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসায় হতাশ জেলেরা।
ভোলা সদরের জেলে মো. সিরাজ মাঝি, আলাউদ্দিন ও ইলিয়াস মাঝি বলেন, ঋণের টাকায় জাল-ট্রলার বানিয়েছি। প্রতিটি ট্রলারে ৫-১০ জন জেলে কাজ করে, যাদের পরিবার রয়েছে। এবার ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাইনি। সম্প্রতি জালে কিছু মাছ পড়তে শুরু করেছিল, তখনই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। তবে সরকারের নির্দেশ মানতে জাল-ট্রলার তীরে উঠিয়ে রেখেছি। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে আবার নদীতে নামব।
জেলে মো. হাসান, খোরশেদ ও বশির বলেন, আমরা চাই অভিযান সফল হোক, তাই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলি। কিন্তু এসময় আমাদের আয় বন্ধ থাকে। প্রতিবছর সরকারের কাছে দাবি জানাই- এই সময় যেন এনজিও কিস্তি বন্ধ থাকে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। কিস্তির লোকজন এসে চাপ দেয়। বাধ্য হয়ে অনেকে নদীতে চলে যায় মাছ ধরতে। এবারও আমরা দাবি জানাচ্ছি, যেন কিস্তি বন্ধ রাখার ব্যবস্থা হয় এবং প্রথম সপ্তাহেই বরাদ্দ চাল বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও মৎস্যজীবী জেলে সমিতির ভোলা জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. এরশাদ বলেন, এবার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেলেও, জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মানতে প্রস্তুত। প্রতিটি ঘাটে গিয়ে আমরা জেলেদের জানিয়েছি, মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে হবে। সরকার ২৫ কেজি করে চাল দিচ্ছে, যা খুবই অপ্রতুল। এই বরাদ্দ বাড়ানো এবং শুরুতেই চাল বিতরণের দাবি জানাচ্ছি।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞা সফল করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স কমিটির মিটিং হয়েছে, প্রচারণাও চলছে। অভিযান পরিচালনার জন্য টিম প্রস্তুত। বরাদ্দ পাওয়া চাল দ্রুত বিতরণ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, টাস্কফোর্স কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন এনজিও কিস্তি স্থগিত থাকবে। এ বিষয়ে এনজিওগুলোকে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এসময় ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ। চলতি অর্থবছরে ভোলায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন।

ভোলা প্রতিনিধি :
প্রকাশের সময়: শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫ । ৬:৫৮ অপরাহ্ণ