নাজিরপুরে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, ডিমের দামেও নেই স্বস্তি

পিরোজপুর প্রতিনিধি :
প্রকাশের সময়: বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫ । ৭:৫৪ অপরাহ্ণ

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় লেয়ার মুরগির খামার একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে সম্প্রতি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং ডিমের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় লোকসানের মুখে খামারিরা। অনেক ছোট ও মাঝারি খামারিকে পড়তে হচ্ছে আর্থিক সংকটে। কেউ কেউ খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

নাজিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন বিশেষ করে মালিখালী, দেউলবাড়ী ও কলারদোয়ানিয়া এলাকায় অসংখ্য ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে লেয়ার মুরগির খামার গড়ে তুলেছিলেন। শুরুর দিকে খরচ কম ও ডিমের ভালো দাম থাকায় অনেকে স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বনির্ভরতার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ডিমের দাম অস্থির হলেও খামারিদের প্রাপ্ত দাম ন্যূনতম পর্যায়েই রয়ে গেছে। এ ছাড়া মুরগির খাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে।

ফলে খরচ বেড়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। আবু নাঈম নামের এক খামারি জানান, একটা মুরগি দিনে একটা করে ডিম দেয়। এখন প্রতি পিস ডিম পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯.৩০ থেকে ৯.৫০ টাকায়। অথচ শুধু খাবার খরচই উঠে যায় ১০ টাকা বা তার বেশি।

ওষুধ, বিদ্যুৎ ও শ্রমিকের মজুরি তো আছেই। খামারিদের অভিযোগ, খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করে পাইকাররা অল্প দামে নিয়ে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে মূল উৎপাদকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

নাজিরপুর সদর এলাকার এক খামারি বলেন, বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১-১২ টাকা, অথচ আমাদের কাছ থেকে ৯.৩০ থেকে ৯. ৫০টাকায় নেন। এত ব্যবধান কিভাবে হয়? ডিম বিক্রির ব্যবধানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশির ভাগ খামারি দাদনে এ ব্যবসাটি করে থাকেন।

খামারিরা মুরগির বাচ্চা ও খাবার দেয় একটি শর্তে। মুরগির এবং ডিম দেওয়া শেষ হলে মুরগি তার মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এখান থেকে বিক্রি হওয়া সিংহভাগ নিয়ে যায় দোকানিরা। এ থেকে উত্তরনের পথ হিসেবে তার বলছেন, সরকারি সহায়তা বা ভর্তুকি পেলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। বিশেষ করে খাদ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে এই খাতটি স্বচ্ছল থাকবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা মাধ্যম হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ডিম ও মুরগী বিক্রি করি। অনেক সময় ছোট খামারিদের পুঁজি থাকে না, সেক্ষেত্রে আমরা তাদের সাহয্য করে থাকি। এটাকে দাদন দেওয়া বলে না। দেশের সব জিনিসের দাম বেড়েছে, তাই খাদ্যের দামও বেশি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আল মুক্তাদির রাব্বি বলেন, মুরগির খাদ্যের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে ভুট্টা। কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভুট্টার চাষ না হওয়ায় এটি আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। শুধু ভুট্টা নয়, ফিড তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সয়াবিন মিল, ভিটামিনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও আমদানি নির্ভর, যা ফিড উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে তোলে। ফলে মুরগির খাদ্যের দাম সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা এবং পরিবহন ব্যয়ের কারণে ফিডের দাম আরও বাড়ছে। তবে ফিডের দাম নির্ধারণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই। এসব সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

 

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন