ভোর নামেনি তখনও। উত্তাল কুয়াকাটার সাগর। বিশাল ঢেউয়ে দুলছে ছোট মাছ ধরার নৌকা। কাঁধে জাল, হাতে ক্র্যাচ, পা হারানো ছোরাফ সমুদ্রযাত্রা শুরু করেন প্রতিদিন এমন প্রতিকূল ভোরে।
বয়স মাত্র ৩০, কিন্তু সংগ্রামের গল্প যেন একটি উপন্যাস। কুয়াকাটা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এই জেলে ২০১৫ সালের এক সড়ক দুর্ঘটনায় হারান বাঁ পা। চিকিৎসার খরচে বিক্রি হয়ে যায় বাবার শেষ সম্বলও। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি ছোরাফ।
কৃত্রিম পা আর ক্র্যাচে ভর করে প্রতিদিনই নামেন সাগরে মাছ ধরতে। পাশে থাকেন ছোট ভাই ও বড় ছেলে। একটি এনজিওর ঋণে ছোট নৌকা বানিয়ে স্যালো ইঞ্জিনে মাছ ধরার জীবনে ফিরেছেন। না পারলে সংসার চলে ছেলের চায়ের দোকান দিয়ে।
স্ত্রী রহিমা বলেন, ‘ঝড়ের রাতে মনে হয়, ফিরবেন তো উনি? সকালে মাছভর্তি ঝুড়ি নিয়ে স্বামীকে দেখলে কান্না গড়িয়ে পড়ে চোখ বেয়ে।’ ছোরাফ বলেন, ‘আমার শরীর ভাঙতে পারে, মন নয়। সন্তানদের পড়াতে চাই, পরিবার বাঁচাতে চাই। বড় ছেলে বাবার পাশে, ছোট ছেলেও মাঝেমধ্যে সাগরে যায়। সংসারের সবাই মিলে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিদিন মাছ পাওয়া যায় না। তবু ছোরাফ হাল ছাড়েন না।’ প্রবীণ জেলে মান্নান হাওলাদার বলেন, ‘পা নাই তো কী হইছে? এমন মনোবল দ্যাহি নাই!’ বাবা কালাম মাঝি বলেন, ‘সব দায়িত্ব এখন ছোরাফের কাঁধে। একটু সহযোগিতা পেলে কষ্টটা হালকা হতো।’
সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের ছোট ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন ছোরাফ। স্রোতের বিপরীতে প্রতিদিনের লড়াই তার অভ্যাস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জীবন বাজি রেখে সাগরে নামি। শুধু চাই সরকার একটু পাশে থাকুক। আমার সন্তানদের হাসিই আমার জয়।’ কলাপাড়ার পরিবেশকর্মী মেজবাহ উদ্দিন মাননুর ভাষায়, ছোরাফ শুধু এক ব্যক্তি নন, তিনি কুয়াকাটার হাজারো সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি। ভয়কে জয় করাই তার আসল লড়াই।

স্টাফ রিপোর্টার :
প্রকাশের সময়: শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ৬:৩৫ অপরাহ্ণ