ভারতীয় সীমান্তে আটক ভোলার ১৯ জেলে, পরিবারে দুশ্চিন্তা

ভোলা প্রতিনিধি :
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ৭:২৯ অপরাহ্ণ

ভোলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের শান্তিরহাট মাছঘাট থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যাওয়া ১৯ জেলের মধ্যে একজন রাজিব চন্দ্র দাস (৩৫)। বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের কথা বলে ৭‑৮ দিনের জন্য মাছ শিকারে যান রাজিব; মেয়েরা নতুন পোশাকের জন্য বায়না ধরেছিল। কিন্তু ১৮ দিন পার হলেও তিনি বাড়ি ফেরেননি, পরিবারের মধ্যে শুরু হয়েছে অনিশ্চয়তা এবং অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। রাজিবের স্ত্রী কল্পনা রাণী দাস জানান, ৫ সেপ্টেম্বর থেকেই স্বামীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।

কথা হয়েছিল ৭‑৮ দিনের মধ্যে ঘরে ফিরবেন। ১৭ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে খবর পান রাজিব ও বাকি জেলেরা ভারতের কারাগারে রয়েছেন। পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন; একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে খাওয়াদাওয়া ও ঘরবাড়ি সব কিছুই বিঘ্নিত হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন বিকেলে কোড়ালিয়া গ্রামের মো. সফিজল মাঝির মালিকানাধীন মাছ ধরার ট্রলারে ১৯ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়।

ইলিশ ধরার পর বাড়ি ফিরছিলেন তারা, কিন্তু ১২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে মোবাইল যোগাযোগও বন্ধ। জানা গেছে, ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় এবং গতিশীলতার অভাবে তারা সাগরে ভাসতে ভাসতে ভারতের সীমানায় চলে যান। এরপর ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ বেল্ট এলাকা থেকে আটক করে।
আটক জেলেদের মধ্যে রয়েছেন — মো. সফিজল ব্যাপারী, মো. শাহে আলম, ছিডু মুন্সি, রাজিব চন্দ্র দাস, মো. আক্তার হোসেন, মো. মিন্টু হাওলাদার, মো. ফরিদ, মো. আলমগীর, মো. ফরিদ, মো. ইউনুস, মো. বাবুল সরদার, মো. নিরব হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. শাহে আলম হাওলাদার, গৌতম চন্দ্র দাস, মো. জাকির, মো. ছগির সিকদার, মো. টুটুল ও মো. শহিদুল ইসলাম।

তারা প্রত্যেকেই দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, কিভাবে তাদের ছাড়িয়ে আনবেন এই অনিশ্চয়তায় তাদের ঘুম নেই। খাদ্য সংকট চলছে, মেয়েদের কান্না থামছে না, অভাবের মধ্যে দিন কাটছে খুব কষ্টে। এই ঘটনায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর ট্রলার মালিক মো. সফিজল মাঝির ভাই মো. ইব্রাহিম ভোলা সদর মডেল থানায় ১৯ জন জেলে নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

ভোলা জেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান ভূইয়া জানান, মৎস্য অধিদপ্তর আটক জেলেদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সব সাহায্য করবে।

ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে জানতে পেরেছি ১৯ জন জেলে ভারতের আলিপুর কারাগারে রয়েছেন। সরকারিভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন