রসালো ও সুষম পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তরমুজের মৌসুম এখন নয়, তারপরও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার তিনজন আদর্শ কৃষকের মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করার সুবাদে মাচাঁয় গাছে গাছে ঝুলছে অফসিজনের রসালো তরমুজ। স্থানীয় কৃষকরা ব্ল্যাক বেরী, ব্যাংক কুইন ও এলটি সুইট বয় তরমুজ চাষে সাফল্য পেয়েছেন। পানির ওপর ভাসমান বেডে কিংবা উচুঁ স্থানের জমিতে বিষমুক্ত তরমুজ চাষে সফলতায় কৃষকদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। এবারে উপজেলার ৩ জন আদর্শবান কৃষক উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় তরমুজ চাষ করেছেন।
উপজেলার দেউলী গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. জালালের ক্ষেতের মাচাঁয় ঝুলছে অফসিজনের তরমুজ। তিনি এবারে ৫০ শতক জমিতে অফসিজনের তরমুজ চাষ করছেন। কৃষক জালাল ছাড়াও এবারে উপজেলার ৩ জন আদর্শবান কৃষক উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় তরমুজ চাষ করেছেন।
তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় ৫০ শতক জমিতে প্রায় ৪৫০ টি তরমুজ গাছের চারা রোপন করেছি। অতিবৃষ্টির কারনে আমার ক্ষেতের ১৫০টি তরমুজ গাছের চারা মরে যায়। এতে আমার খরচ হয়েছে ২-৩ হাজার টাকা। বাকী খরচ উপজেলা কৃষি বিভাগ দিয়েছে। একটি গাছে চার থেকে পাঁচটি তরমুজ ধরেছে। দুই একটি ছোটগুলো ফেলে দিলে অন্য তরমুজগুলো আকারে বড় হয়। ভালো ফলন হওয়ায় এখন মাচায় অসংখ্য তরমুজ ঝুলছে। মৌসুমে তরমুজ চাষ মাটিতে হলেও অসময়ের ওই তরমুজ মাঁচায় চাষ হচ্ছে। আমার এখানে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসেও সুস্বাদু তরমুজ পাওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত ১৫-২০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। তবে ক্ষেতে যে পরিমানে তরমুজ রয়েছে তাতে অর্ধলক্ষ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবো।
কৃষক জালাল বলেন, আমার তরমুজের ক্ষেতটি সড়কের পাশে হওয়াতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ও স্থানীয় কৃষকরা এসে দেখছেন কেউ আবার ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকরা অসময়ের তরমুজ চাষ দেখে আগামীতে তারাও পতিত জমিতে কিংবা বাড়ির পাশে উচুঁ স্থানের জমিতে অসময়ের তরমুজ চাষ করার আগ্রহী হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশের জমিতে কৃষক জালালে ক্ষেতে মাচায় ঝুলছে অফসিজনের তরমুজ। যেখানে তরমুজ গাছের লতাগুলোকে বেড়ে ওঠার জন্য বাঁশ ও জাল দিয়ে মাঁচা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আর সেই মাচাতেই ঝুলছে সবুজ-ডোরাকাটা রসালো তরমুজ। অনেকেই আসছেন তরমুজ দেখার জন্য। প্রথমে কেউ দেখলে বিশ্বাস করবে না এভাবে তরমুজ চাষ হচ্ছে। স্বল্প জমিতে অধিক ফসল ও লাভজনক চাষ হচ্ছে তরমুজ চাষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসসিপি) প্রকল্পের আওতায় উচ্চ মূল্যের ফসল(তরমুজ) উৎপাদন প্রদর্শনীতে উপজেলার ৩টি এলাকায় অফসিজনের তরমুজের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে বেশি ফলন হয়েছে দেউলী গ্রামের আদর্শ কৃষক জালালের ক্ষেতে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মৌসুম ছাড়া অসময়ের এই তরমুজ চাষের উদ্ভাবনে এটা কৃষি বিভাগের সফলতা। বীজ বপনের আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যেই এই তরমুজ বিক্রয় উপযোগী হয়ে উঠে। আর এই তরমুজ চাষে রাসয়নিক কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। এই তরমুজ বিষমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি সুষম পুষ্টিগুণও রয়েছে। কম পরিশ্রমে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়।
এ পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে রোগ বালাই যেমন কম, তেমনি পোকার উপদ্রবও কম। তিনি আরো বলেন,অফসিজনের তরমুজ চাষ করতে বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। এবারে একটানা অতি বৃষ্টির কারনে কৃষকের রোপনকৃত তরমুজের কিছু চারা নষ্ট হয়ে গেছে। অসময়ে পানির ওপর ভাসমান বেডে কিংবা উচুঁ স্থানের জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশের সময়: শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ৭:০৬ অপরাহ্ণ