চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অনেকটা নার্সনির্ভর হয়ে পড়েছে হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম।
৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে দ্রুত জনবল নিয়োগ করে সংকট দূর করার দাবি স্থানীয়দের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন দুই শর বেশি রোগী হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
১৯৭৪ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে শুরু হয় তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। উপজেলার দেড় লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৬ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে ভবন ও সরঞ্জাম থাকলেও পদ সৃষ্টি না হওয়ায় কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যা অনুযায়ী।
সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে ১৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও মনপুরা হাসপাতাল থেকে ডেপুটেশনে আসা একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
এদিকে চরম চিকিৎসক সংকটের মধ্যেও এ হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসক তাদের সুবিধামতো ঢাকা ও বোরহানউদ্দিনে ডেপুটেশনে চলে যান। এ ছাড়া শূন্য রয়েছে নার্সিং সুপারভাইজার, সিনিয়র স্টাফ নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৭১টি পদ। লোকবলের অভাবে অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
দ্রুত এ অচলবস্থা নিরসন করে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দাবি রোগীদের।
পেট ব্যথাসহ শারীরিক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উপজেলার কেয়ামুল্যা গ্রামের বাসিন্দা জান্নাত বেগম জানান, তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিন পর একজন চিকিৎসক তাকে দেখতে এসেছেন। এর আগের তিন দিন কেটেছে নার্সের তত্ত্বাবধানে। ওই হাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীরই একই অবস্থা।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগী জানান, অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হলেও কোনো চিকিৎসা মিলছে না। দু-তিন দিনেও চিকিৎসকদের দেখা পাওয়া যায় না। এমনকি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না হাসপাতালটিতে। তার পরও বাধ্য হয়েই এখানে আসতে হয় তাদের।
হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ডা. খালিদ হাসান তানিম জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে বেশির ভাগ সময় একজনকেই পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা দিতে হয়। একা চিকিৎসা দিতে গিয়ে দেখা যায়, যদি ইনডোরে কোনো রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে যাই, তখন জরুরি বিভাগে কোনো রোগী এলে আবার সেখান থেকে জরুরি বিভাগে আসতে হয়। আবার জরুরি বিভাগে কোনো রোগীর সেবা দেওয়ার সময় ইনডোরে কোনো রোগীর সমস্য হলে সেখানে যেতে হয়। এ অবস্থায় এক প্রকার হিমশিম খেতে হয়। তার পরও একজনের পক্ষে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাহাত হোসেন বলেন, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পর সম্প্রতি একজন ডেন্টাল সার্জন ও দুইজন চিকিৎসা কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে যোগ দিয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে আরো চিকিৎসক পদায়ন করা হবে। এ ছাড়া ১৫ জন নার্স পদায়ন করা হয়েছে। তারাও যোগদান করবেন। আশা করি, খুব দ্রুত হাসপাতালটির চিকিৎসকসহ জনবল সংকট দূর হবে।

ভোলা প্রতিনিধি :
প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ৭:১৬ অপরাহ্ণ