বুধবার দুপুর। রোদে ঝলমল করছে কুয়াকাটা সৈকত। সাগরের নীল ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে উপকূল। দূর থেকে ভেসে আসছে ঢেউয়ের গর্জন আর পর্যটকদের হাসি-আনন্দ।
কেউ ছুটে নামছেন কোমড় সমান নোনা জলে, কেউ বালুচরে বসে সেলফি তুলছেন। এমন উৎসবমুখর আবহের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক ভয়ানক ছায়া। সেই ছায়ার অন্তরালে ছিলেন বরগুনার যুবক রুবেল (৩০)। তিনি পর্যটকদের গোসলরত অবস্থায় গোপনে ভিডিও ধারণ করতেন।
পরে সেসব ছড়িয়ে দেওয়া হতো ফেসবুক বা টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, নামে-বেনামে। অচেনা প্রোফাইল থেকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অপমানিত হতেন পর্যটকরা। আর দোষারোপ হতো সৈকতের ফটোগ্রাফারদের।
কেউ ছবি তুলতে চাইলে ফটোগ্রাফাররা অনুমতি নিতেন। অথচ ভিডিও কেলেঙ্কারির দায় তাদের ওপরই চাপানো হতো। এ অবস্থায় সম্প্রতি ফটোগ্রাফারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে চক্রকে চিহ্নিত করার কৌশল শেখানো হয়। সেই কৌশল কাজে লাগিয়ে তারা বুধবার দুপুরে ধরেন রুবেলকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় প্রশাসন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে রুবেলকে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন কলাপাড়ার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসীন সাদেক। বুধবার বিকেলের দিকে রুবেলকে পুলিশ হেফাজতে পটুয়াখালী কারাগারে নিয়ে আসা হচ্ছিল। রুবেলের অপকর্মের বিষয়টি মুহূর্তে সৈকতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক শবনম রহমান বলেন, ‘আমরা যখন পানিতে নামতাম, মনে হতো কে জানি ভিডিও করছে। এখন অন্তত নিশ্চিন্ত লাগছে।’
চট্টগ্রামের পর্যটক জামিলুর রেজার মন্তব্য, ‘কুয়াকাটা আমাদের জাতীয় সম্পদ। এখানে যদি নিরাপত্তা না থাকে, কেউ আসতে চাইবে না। দোষীদের শাস্তি দেখে আমরা আশ্বস্ত।’
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের ফটোগ্রাফার সমিতির আরিফুর রহমান ও রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমাদের বদনাম হচ্ছিল। আমরা নাকি গোপনে ছবি তুলি। এমন অভিযোগ শুনতে হতো বারবার। এই অভিযোগের কারণে আমাদের রোজগারে ভাটা পড়ে। আজ প্রমাণ হলো দোষ আমাদের নয়।’
কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক বলেন, ‘পর্যটকদের মর্যাদা ও গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সৈকতের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। যারা অপকর্ম করবে, তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে।’

স্টাফ রিপোর্টার :
প্রকাশের সময়: বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ৭:০৮ অপরাহ্ণ