ঝালকাঠির নলছিটিতে নৃশংস হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও মামলা হয়রানির প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টায় বরিশাল প্রেসক্লাবের সম্মেলন ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে মিরাজ মাঝি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় তিনি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দীর্ঘদিনের জমি বিরোধ:
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মিরাজ মাঝি অভিযোগ করেন, তাদের পরিবারের সাথে প্রতিপক্ষ আসামিদের দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষরা একাধিকবার তাদের ঘরে আগুন দেয়, ভাঙচুর চালায়, মালামাল লুটপাট করে এবং ফলদ গাছপালা কেটে নিয়ে যায়। এমনকি ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক কর্তৃক অসহায় পরিবারের জন্য নির্মিত একটি ঘরও হামলাকারীরা ভেঙে লুটপাট করে নেয়।
তিনি আরও জানান, আসামিরা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের পরিবারের নামে জমি লিখে দেয়ার পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা দাবি করে আসছে। এ দাবি না মানায় প্রতিপক্ষরা একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার একটি প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে গেছে। এমনকি একটি মিথ্যা হত্যা মামলাও দায়ের করে পরিবারকে চাপে রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আদালত প্রাঙ্গণে হামলা:
সবশেষ হামলার ঘটনাটি ঘটে গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঝালকাঠি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৪র্থ তলায়। এসময় মিরাজ মাঝি ও তার পরিবারের সদস্যরা আদালতের ৪০৪ নং কক্ষের সামনে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ রফিকুল মাঝি (২৩), জহিরুল মাঝি (২৫), মনি আক্তার (৩৫) ও পপি আক্তার (২৭) হঠাৎ তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
হামলায় বাদী মিরাজ মাঝিসহ তার স্বজনরা গুরুতরভাবে আহত হন। এসময় ১নং আসামি রফিকুল মাঝি তার পকেট থেকে ধারালো চাকু বের করে জসিম মাঝিকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করলে জসিম নিজেকে সরিয়ে নিলেও চাকুর কোপ তার নাকে লাগে। এতে তিনি গুরুতর জখম হন। প্রথমে তাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নেয়া হলে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হামলাকারী গ্রেপ্তার, নতুন হামলার চেষ্টা:
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, হামলার সময় আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত লোকজন চিৎকার শুনে এগিয়ে আসেন এবং পুলিশের সহায়তায় হামলাকারীদের আটক করা হয়। তবে আদালতের বাহিরে আবারও হামলার উদ্দেশ্যে এমদাদুল মাঝি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। পরবর্তীতে পুলিশ পাহারায় ভুক্তভোগী পরিবার আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ:
মিরাজ মাঝি অভিযোগ করে বলেন, হামলাকারীরা এলাকায় প্রভাবশালী এবং বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। ফলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
গণমাধ্যম ও প্রশাসনের প্রতি আবেদন:
সংবাদ সম্মেলনের শেষে ভুক্তভোগী পরিবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন –“আমরা অসহায়, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। জীবনের ভয়ে নিজ বাড়িতে পর্যন্ত থাকতে পারছি না। আমাদের উপর সংঘটিত নৃশংস হামলার যথাযথ বিচার চাই এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

স্টাফ রিপোর্টার :
প্রকাশের সময়: সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ৬:০২ অপরাহ্ণ