বরগুনায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর নয় শতাধিক গ্রাহকের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত হিসাব জানাতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি নিজেই।
তাদের ধারণা, অন্তত অর্ধকোটি টাকা গ্রাহকদের কাছে পাওনা রয়েছে। তথ্যের ঘাটতি ও জনবল সংকটে বিল আদায় কার্যত থেমে আছে বলে জানিয়েছে বিটিসিএল।
বরগুনা শহরের কলেজ রোডের স্বপন কুমার রায়ের কাছে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিটিসিএলের পাওনা রয়েছে দুই লাখ নয় হাজার টাকা। কিন্তু স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই নামের কাউকে তারা চেনেন না। পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি ভারতে চলে গেছেন। ফলে এত বিপুল বকেয়া টাকা আদায় কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একইভাবে বালিকা বিদ্যালয় সড়কের কামরুল ইসলাম কাঞ্চনের কাছে প্রায় ৩৩ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়েও কর্তৃপক্ষ তার সন্ধান পায়নি। এ ধরনের বহু গ্রাহকের খোঁজই মিলছে না। ফলে বকেয়া আদায় প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছে।
বালিকা বিদ্যালয় সড়কের ব্যবসায়ী তানিম বলেন, ‘আমি এখানে ব্যবসা করি, আমাদের বাসাও এখানে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বসবাস। কিন্তু কামরুল ইসলাম কাঞ্চন নামের কাউকে কখনও চিনিনি।’
বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্রাহকদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণের অভাবে এখন অনেকের পরিচয়ই শনাক্ত করা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে নয় শতাধিক সংযোগ বহু বছর ধরে অচল রয়েছে। এসব গ্রাহকের খোঁজ না পাওয়ায় বকেয়া আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে জেলায় সচল টেলিফোন সংযোগ মাত্র ৬৯৪টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৭৪টি, পাথরঘাটায় ৫২টি, আমতলীতে ৭৭টি, বেতাগীতে ৫১টি, বামনায় ৩৭টি এবং তালতলীতে ২৫টি। এছাড়া জেলায় এডিএসএল সংযোগ রয়েছে ৭৮টি এবং জিপিএন সংযোগ সচল রয়েছে ১ হাজার ৭৫টি।
বিটিসিএল বরগুনা কার্যালয়ের অফিস সহকারী ওবায়দুর রহমান ফজলু বলেন, ‘৮০ এবং ৯০-এর দশকে যেসব সংযোগ দেয়া হয়েছিল, সেখানে গ্রাহকের শুধু নাম আছে। অন্য কোনো তথ্য নেই। তাই এখন বকেয়া থাকা গ্রাহকদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ফলে বকেয়া বিল আদায় কার্যত সম্ভব হচ্ছে না।’
প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ১০ লাখ টাকার বকেয়া বিল আদায়ের জন্য ১৫ গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া আরও ৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা আদায়ের জন্য ২০ গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বিটিসিএল-এর বরগুনা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (টেলিকম) মো. বনি আমিন বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে আমাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অফিসে তীব্র জনবল সংকট রয়েছে। তাই বকেয়া বিল আদায় ও প্রকৃত পাওনার হিসাব নির্ধারণ করতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন বলেন, ‘রাষ্ট্রের টাকা অনাদায়ী রাখার সুযোগ নেই। বিটিসিএলের পাওনা আদায়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

বরগুনা প্রতিনিধি :
প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫ । ৮:৩১ অপরাহ্ণ