তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটিই ৩ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা

ভোলা প্রতিনিধি :
প্রকাশের সময়: রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫ । ৭:০৮ অপরাহ্ণ

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তিন গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাটির কাঁচা রাস্তাটি পাকা হয়নি। চলতি বর্ষা মৌসুমে সেখানকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণে। কর্দমাক্ত কাঁচা রাস্তাটি এখন পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, তবুও বাধ্য হয়েই চলাচল করতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।

এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন কোমলমতি শিক্ষার্থী, রোগী ও বয়স্করা। বছরের পর বছর কাঁচা রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় ধানের চারা লাগিয়ে অভিনব প্রতিবাদসহ মানববন্ধন করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তাটি দৌলতখান উপজেলার খায়েরহাট-সংলগ্ন দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাবলু মাঝির দোকানের সামনে থেকে শুরু হয়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট মানিকা ফাজিল মাদ্রাসার সামনে গিয়ে পৌঁছেছে। মাঝখানে সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। এটি দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করেন দৌলতখানের দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জয়নগর গ্রাম, বোরহানউদ্দিনের কুতুবা ইউনিয়নের ছোট মানিকা ও গঙ্গাপুর গ্রামের বাসিন্দারা। বর্ষায় রাস্তাটি এখন পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জসিম, আব্দুল মালেক ও সিরাজ বলেন, সরকার আসে-যায় কিন্তু আমাদের ৩ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি কেউ পাকা করে দেয় না। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আমরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাই, এ বছরেও ব্যতিক্রম হয়নি। কর্দমাক্ত হওয়ায় এ রাস্তা দিয়ে তেমন যানবাহন চলাচল করে না, চলতি বর্ষায় অনেকটাই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি যেতে হয়, আমাদের দুর্দশা দেখার কেউ নেই।

শিক্ষার্থী মো. রাফি, ইয়াছিন ও নাজমিন বলেন, পুরো রাস্তায় কাদা। এসবের মধ্য দিয়েই পায়ে হেঁটে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে পোশাক ময়লা হয়। সেই অবস্থায় শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হই।

স্থানীয় রিকশাচালক মো. আব্বাস ও রুবেল বলেন, এ রাস্তায় এক দিন যাত্রী নিয়ে ঢুকলে যে টাকা ভাড়া পাই, তার চেয়ে বেশি গাড়ি মেরামতের পেছনে খরচ হয়। যার কারণেই আমরা এ রাস্তায় যাত্রী নিয়ে যাই না।

এদিকে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সড়কটি পাকা না হওয়ায় সড়কটিতে ধানের চারা লাগানোসহ সম্প্রতি মানববন্ধন করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাদের মধ্যে আমির হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও মুরাদ বলেন, একটি পাকা সড়কের জন্য আমাদের আর্তনাদ কেউ শোনেন না। তাই আর কোনো উপায় না পেয়ে কৃষি জমির মতোই রাস্তার কর্দমাক্ত মাটিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। এ ছাড়া প্রতিবাদ জানানোর আর কোনো উপায় নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইদুল ইসলাম খান বলেন, এর আগে, বিষয়টি কেউ জানায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে শিগগিরই মাটির কাঁচা রাস্তাটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পাকা রাস্তা করার চেষ্টা করব।

স্থানীয় বসিন্দারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ওই ৩ গ্রামের ২৫ হাজার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে কাঁচা রাস্তাটি অতি দ্রুত পাকা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এতে উন্নত হবে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনমান।

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন