শেবাচিমের সামনে উত্তেজনা, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পাল্টা কর্মসূচি, কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥
প্রকাশের সময়: রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫ । ৭:৩৫ অপরাহ্ণ

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের ২১তম দিনে আবারো আন্দোলনরতদের উপর হামলা চালিয়েছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারীরা। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার (১৭ আগস্ট) বিকেল তিনটার দিকে শেবাচিম হাসপাতালের প্রধান ফটকে আন্দোলনকারীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হাসপাতালের কর্মচারীরা। পরে উভয়গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় বড়ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাসপাতালে মধ্যে প্রবেশ করতে চাইলে হাসপাতালের প্রধান গেইট আটকে দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রাখে আন্দোলনকারীরা।

এসময় হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অভ্যন্তরে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের অভ্যন্তর থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপরই সেখানে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।

১৮তম দিনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর শেবামেকের কর্মচারীদের হামলার প্রতিবাদে ও বিচার দাবি করে ২১তম দিনের (১৭ আগস্ট) কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেই অনুযায়ী রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়। পরবর্তীতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা শেবামেকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।

সূত্রমতে, বিক্ষোভ মিছিলের খবর পেয়ে শেবামেকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হাসপাতালের অভ্যন্তরে অবস্থান নেয়। এসময় সেখানে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দেওয়া আগে থেকেই হাসপাতাল গেইটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তারা সংঘাত এড়াতে শেবামেকের প্রধান গেইট বন্ধ করে দেয়। যেকারণে আন্দোলনকারীরা হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেননি।

এরপর আন্দোলনরতরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে। তারা দালাল ও সিন্ডিকেট বিরোধী নানা শ্লোগান দেয়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ডিসি অফিস থেকে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়  সোমবার সকাল ১১ টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের আমতলার মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।

এদিকে নিরাপত্তা জনিত কারণে চিকিৎসকরা হাসপাতাল ত্যাগ করে এক ঘন্টা কর্মবিরতিতে ছিলো। দুপুর ২ টা বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হন রোগীরা। জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি হয়ে ওয়ার্ডে এসে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পরেন।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জানান, ‘কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরা গত ১৪ আগস্ট কর্মবিরতিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালকের অনুরোধ ও রোগীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি। এসময় পরিচালককে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেয়া হয়। কিন্তু আজকে ১৭ আগস্ট আবার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলীপ রায়ের উপর অতর্কিত হামলা করে। এছাড়া হাসপাতালের স্টাফদের উপর হামলা করে। হাসপাতাল ভবনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুরো হাসপাতালে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ঘটনায় উসকানিদাতা এবং জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানাই। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় ১৭ আগস্ট রোববার বিকাল ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করছি।;

মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা না থাকায় কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এর কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। তবে হাসপাতাল পরিচালকের বিশেষ অনুরোধে ও পুলিশের করা নিরাপত্তায় এবং মুমূর্ষু রোগীদের স্বার্থে আমরা মিড লেভেল চিকিৎসকরা বিকেল ৫ টার পর থেকে শুধু মাত্র জরুরি সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে দুপুর ২ টা বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা চিকিৎসা বঞ্চিত হন রোগীরা। জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি হয়ে ওয়ার্ডে এসে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পরেন। তারা ছুটে যান হাসপাতাল পরিচালকের কাছে।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, চিকিৎসকরা কর্মস্থল ত্যাগ করায় সেবা না পেয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা কান্না করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। যে কয়েক জন চিকিৎসক এসেছেন তাদের দিয়ে আপাতত জরুরি সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনরতদের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন