পিরোজপুরে ঝুঁকিতে কচা নদীর বাঁধ, দেড় কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন

পিরোজপুর প্রতিনিধি :
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫ । ৭:৩৪ অপরাহ্ণ

ডুবচর জাগা শান্ত কচা বর্ষায় ফিরেছে তার চিরচেনা আগ্রাসী রূপে। এতে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পিরোজপুরের কচাপাড়ের বাসিন্দারা। তবে এবার যেন আতঙ্ক বেড়েছে কয়েকগুণ। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হওয়া প্রায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

বাঁধটি এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখাও দিয়েছে। আর বাঁধটি ভেঙে গেলে কচায় বিলীন হবে ইন্দুরকানীর কয়েকটি গ্রাম। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত বছর ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বিলীন হয় বাঁধটি। স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অংশ নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালের ২৬ ও ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ইন্দুরকানীর কচা নদীতে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়। এতে নদীর তীরবর্তী ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ধস দেখা দিয়েছিল।

সে সময় আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। দুই হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো সহায়তা করা হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ঘূর্ণিঝড়ের পর কচা নদীর তীরবর্তী বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ এলাকা নৌপথে ঘুরে পরিদর্শন করেন জনপ্রতিনিধিরা। এ সময় দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানালে তা পূরণের আশ্বাস দেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কচা নদীর শুধু টগড়া প্রান্তে আংশিক বাঁধ নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়।

কাজটি শেষ হয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে। কিন্তু জুন-জুলাইতে নতুন নির্মাণ করা সেই বাধে দেখা দিছে ভাঙন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাঁধের কাছাকাছি জায়গা থেকে মাটি কেটে নির্মাণ করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধটি টেকসই না করায় পানির চাপে বিভিন্ন স্থান ধসে গেছে। যেকোনো সময় এটি নদীতে বিলীন হতে পারে।

সরেজমিন কচা নদী তীরবর্তী টগড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হওয়া প্রায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবো সূত্রে জানা যায়, দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ বাজেট ছিল ২৫ লক্ষ টাকা।

জানা গেছে, ইন্দুরকানী, কালাইয়া, সাঈদখালী, বালিপাড়া, চরবলেশ্বর, চন্ডিপুর, খোলপেটুয়া ও কলারণের বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এখন ভাঙা স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে।

গত বছর ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছবাসে বিলীন হওয়া টগরা বেড়িবাধ এলাকার মহারাজ হাওলাদার বলেন, ‘পানির স্রোতে আর তীব্র বাতাসে তার ঘরটি ভেঙে ভেসে যায়। এখন ছয় সদস্যের পরিবার ছোট একটি ঘরে থাকি। শক্ত বেড়িবাঁধ থাকলে এমন হত না। এ বছর বাঁধ বানানোর পর নতুন করে নদীর সেই ভাঙন দেখা দেওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে তার পরিবারের।’

বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা আজগর বলেন, ‘নদী একেবারে আমার ঘরের কাছে চলে এসেছে। গতবার এ বাঁধের অনেক কিছু নিয়ে ভেঙে গেছে। এবার যে ভাবে বাঁধ ভাঙা শুরু করেছে তাতে মনে হয় যদি আবার ঝড় আসে আমরা প্রাণে মারা যাব। সরকার একটি মজবুত বাঁধ নির্মাণ করে দিতো তাহলে মনে হয় আমরা বাড়ি-ঘর রক্ষা করতে পারতাম।’

বয়স্ক আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের এ বাঁধ অনেক আগে তৈরি করা হয়েছে। গত বছর কাজ করেছে কিন্তু মাসখানেকের ভেতরে আবার নতুন করে ভাঙা শুরু করেছে। আমরা কি সারাজীবন ভয়ে কাটাব? আমরা আমাদের জমিজমা বাড়িঘর বাঁচাতে চাই। সরকার যেন তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. নেসার উদ্দিন বলেন, ‘কয়েক মাস আগে নির্মাণকাজ শেষ করলেও পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ সংস্কার করা না হলে এলাকার মানুষ ঝুঁকিতে থাকবে।’

টেকসই বাঁধ ও স্লুইস গেট সচল থাকলে পানির চাপ থেকে মানুষ বাঁচতে পারবে। নদী তীরবর্তী মানুষকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইব হোসেন বলেন, ‘কচা নদীর নির্মাণ করা বেড়িবাঁধের যে স্থানে ধস দেখা গেছে সেই সব স্থানে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।’

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন