আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়ছে বরিশাল

ফাহিম ফিরোজ ॥
প্রকাশের সময়: সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫ । ৮:৫৩ অপরাহ্ণ

আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা পদ্ধতিতে পিছিয়ে পড়ছে বরিশাল। ফলে পাঠদানে আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে অযত্ন-অবহেলা ও তদারকির অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের অন্যতম উপকরণ ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর। তাছাড়া অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই ইন্টারনেট সংযোগ।

জানা গেছে, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষার পদ্ধতির তুলনায় আরও কার্যকর এবং আকর্ষণীয়। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে পাঠদান আরও ইন্টারেক্টিভ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বোধগম্য হয়। এটি শিক্ষার মান উন্নত করতে এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

বরিশাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অফিস জানিয়েছে, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে বিভিন্ন ধরনের ভিজ্যুয়াল, অডিও এবং ইন্টারেক্টিভ উপাদান ব্যবহার করে পাঠদান করা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা আরও মনোযোগ সহকারে শিখতে পারে এবং শেখার প্রক্রিয়াটি আরও আনন্দদায়ক হয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের জন্য ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত।

২০১৮ সাল থেকে এই পদ্ধতি শুরু হলেও এখন বরিশালের অধিকাংশ বিদ্যালয় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস হচ্ছে না। বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৫৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ধাপে ২০১৮ সালে জেলার অধিকাংশ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর বিতরণ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরগুলো বিকল অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষকরা শুধু পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমেই পাঠদান করাচ্ছেন। ফলে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়ছে বরিশাল।

এদিকে দ্বিতীয় ধাপে বরিশালের ১০টি উপজেলায় পিইডিপি-৪ প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ৬৫৭টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের জন্য প্রজেক্টর বিতরণ করবে। এর মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলায় ১২৩, বাবুগঞ্জ উপজেলায় ৩৫, মুলাদি উপজেলায় ৬৭, হিজলা উপজেলায় ৫০, গৌরনদী উপজেলায় ৪০, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ৪৭, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় ৯৪, বানারীপাড়া উপজেলায় ৪৫, উজিরপুর উপজেলায় ৭৫ ও বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ৯৯ টি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের জন্য প্রজেক্টর দেয়া হবে।

শিক্ষকরা মনে করছেন, সরকারের দেয়া এসব ল্যাপটপ ও প্রোজেক্টর এর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা না গেলে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও পিছিয়ে পড়বে বরিশালের শিক্ষার্থীরা।

আগৈলঝাড়া উপজেলার উত্তর শিহিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা আক্তার বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আইসিটি তথা মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১৮ সালে আমাদের স্কুলে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ল্যাপটপ দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু ইন্টারনেটের কোন সংযোগ নেই। তাছাড়া কিছুদিন পরেই নষ্ট হয়ে যায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। বর্তমানে দুইটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া ল্যাপটপও নষ্ট।

মুলাদী উপজেলার হালিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, পাঁচ বছর পূর্বে একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের জন্য প্রজেক্টর পেয়েছিলেন যেটি এখন নষ্ট অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া চলতি বছরে আরও একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর পেয়েছেন সেটিও নষ্ট অবস্থায় আছে। রাউটার পেলেও তাতে নেই ইন্টারনেট সংযোগ। শিক্ষকরা শুধু ল্যাপটপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আইসিটি ও মাল্টিমিডিয়া বিষয়ে পাঠদান করান।

বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: আল এমরান বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদানে মনোযোগী করার জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের গুরুত্ব অনন্য। এই বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বিতরণ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপে বরিশালের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অধিকাংশই স্কুলেই মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ল্যাপটপ নষ্ট থাকার বিষয়টি শুনেছি। সে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

 

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন