মেঘনার ভাঙনে বিলীনের পথে মনপুরা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫ । ৮:৪৭ অপরাহ্ণ

মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভোলার মনপুরা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটনকেন্দ্র দখিনা হাওয়া সৈকতের বেশ কিছু অংশ। ফলে দূরদূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা সেখানে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক ভাঙনে উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া, উত্তর সাকুচিয়া, মাস্টার হাট, দাসের হাট, রামনেওয়াজ এলাকাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় স্থানীয় সমাজসেবক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) নির্দেশ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় এলাকা দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। এখানকার ম্যানগ্রোভ বনের পাশাপাশি বিস্তীর্ণ বেলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। উপজেলা পরিষদের পাঁচ দিঘি, চৌধুরী ফিশারিজ প্রজেক্ট ও মেঘনা নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন এখানকার বেশ জনপ্রিয় স্থান। ২০২০ সালে দ্বীপে গড়ে তোলা হয় পর্যটনকেন্দ্র দখিনা হাওয়া সি বিচ। দ্বীপের নিস্তব্ধতায় সেখানে সহজেই হারিয়ে যেতেন ভ্রমণপিপাসুরা। সৈকতে একসময় পর্যটকদের ভিড় থাকায় গড়ে উঠেছিল ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জমজমাট ছিল পুরো এলাকা।

এখন মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে দক্ষিণা হাওয়া সি বিচের কিছু অংশ। পর্যটকেরা জানান, মনপুরার এই সৈকতে এলে আগে অনেকটা কক্সবাজারের মতো অনুভূতি হতো। কিন্তু এখন শুধু বিস্তীর্ণ ভূমি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে সৈকতটি ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল বেশ রমরমা। এখন তেমন পর্যটক না আসায় ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

মনপুরা মনোয়ারা মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম শাহীন বলেন, দক্ষিণা হাওয়া সি বিচটি আর আগের মতো নেই। নদীভাঙনে এটি প্রায় বিলীনের পথে। সম্প্রতি কয়েকবার বন্যার কারণে এটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বর্ষার কারণে ভাঙন রোধে পাউবোর কাজও আপাতত বন্ধ রয়েছে।

নদীভাঙন রোধে স্থানীয় সমাজসেবক ছিদ্দিক উল্লাহ ১৩ জুলাই পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ১৭ জুলাই পাউবোকে নির্দেশ দেয়।

এ বিষয়ে ছিদ্দিক উল্লাহ গতকাল সোমবার বলেন, ‘অব্যাহত নদীভাঙনে হুমকির মুখে দখিনা হাওয়া সি বিচসহ পুরো মনপুরা উপজেলা। যার কারণে আমি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি। মন্ত্রণালয় গুরুত্ব অনুধাবন করে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এরপরও যদি পাউবো কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে দায়িত্ব অবহেলার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে ভোলা-২ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাদ মো. আসফাউদদৌলা বলেন, মনপুরা দখিনা হাওয়া সি বিচটির কিছু অংশ আগে নদীভাঙনের ফলে বিলীন হয়েছে। পরে সি বিচটি রক্ষায় বেড়িবাঁধ করার পর এখন আর ভাঙছে না। তবে মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দিয়েছে, সে বিষয়ে একটি প্রকল্প ঢাকায় পাঠানো হবে। সেটি পাস হলে ভাঙন রোধে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তখন সি বিচটি আবার জেগে উঠবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক: মেহেরুন্নেছা বেগম।  কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক আজকের বার্তা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন