ঢাকা
বরিশালে বুধবার (২৪ আগস্ট) থেকে নতুন সময়সূচী অনুযায়ী চলছে অফিসিয়াল কার্যক্রম। বেলা ৩ টার মধ্যেই কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এর ব্যতিক্রম আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোতে কার্যক্রম চলছে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
যদিও সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ রয়েছে সরকারের। ব্যাংকের ক্ষেত্রে সময় ৯ টা-৪ টা। তবে এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটছে ব্যাংকের বেলায়। নতুন নিয়মানুযায়ী ব্যাংকের কার্যক্রমের সময়সূচী সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে কর্মঘণ্টা পূর্বের ন্যায় ৮ ঘণ্টাই রয়েছে। অন্যদিকে রাত ৮ টার পর সবধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ উপেক্ষিত হচ্ছে বরিশাল মহানগরীতে। অলিগলির দোকানপাট খোলা থাকছে রাত ১১ টা-১২ টা পর্যন্ত।
অপরদিকে যাদের অনুমতি রয়েছে রাত ৮ টার পর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার, তারা প্রয়োজনের চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ অপচয় করছেন। ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে অনেকটাই।
বুধবার (২৪ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারী নির্দেশনা মেনে বরিশালের সবধরনের সরকারী, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৮ টায় শুরু হয়ে বিকাল ৩ টায় শেষ হচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। ২২ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এ বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং সেবাগ্রহীতারা। একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্যাংকের প্রায় সবধরনের কার্যক্রম বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট। কম্পিউটার এবং মানি কাউন্টিং (টাকা গোনার) মেশিন পুরোপুরি বিদ্যুৎ নির্ভর। আর এয়ারকুলার তো আছেই। তাই একটি ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রচুর বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন।
তারা জানান, সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে অন্যান্য অফিসের সময়কাল ১ কর্মঘণ্টা কমিয়ে এনেছে। কিন্তু নতুন সময় নির্ধারণ করায় ব্যাংকের কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় ৮ ঘণ্টাই রয়েছে। এছাড়া নগরীর অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্ধই থাকে। ব্যবসায়ীরা সকাল ১০ টার আগে লেনদেনে তেমন একটা আগ্রহী নন। আর যেহেতু অধিকাংশ ব্যাংকের মূল গ্রহীতা ব্যবসায়ীরা, সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নতুন সময় নির্ধারণের বিষয়টি কতোটা যৌক্তিক এমন প্রশ্ন তাদের। তবে এরসাথে ভিন্নমতও পোষণ করেছেন অনেক কর্মকর্তা।
তারা আরও জানান, নতুন নিয়মানুযায়ী লেনদেনের সময় ১ ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছে। এরফলে সেবা কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পাবে- এমন আশাবাদী তারা। তবে পরস্পরবিরোধী উভয় মন্তব্যকেই সমর্থন করেছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে রাত ৮ টার পর দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ মানছেন না নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী। বিশেষকরে অলিগলির দোকানগুলো খোলা থাকছে অধিক রাত অবধি। সংশ্লিষ্টদের নজরদারির অভাবকে পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন দোকানিরা। আর এ নির্দেশনার আওতার বাইরে যেসব ব্যবসায়ীরা রয়েছেন তারা যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। গভীর রাত পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় আলো জ্বালিয়ে রাখছেন তারা।
এছাড়া সারারাত দোকানের সাইনবোর্ডের আলো জ্বলছে বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের। বিদ্যুতের এমন অপচয়রোধে সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন নগরবাসী। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এটিএম তরিকুল ইসলাম জানান, বরিশাল নগরীতে তাদের গ্রাহক রয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার। দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট যা ৩টি উৎপাদন কেন্দ্রের মাধ্যমে মেটানো হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাত ৮টার পর দোকানপাট খোলা থাকলে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মনিটর করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। এজন্য তাদের ২টি ইউনিট থেকে দুটি টিম নগরীতে কাজ করছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে জানানো হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। নির্দেশনা যথাযথ পরিপালনে সংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান তিনি।
