সুমাইয়া জিশান ॥
বরিশালে ভাসমান ব্যবসায়ীরা জড়াচ্ছে অপরাধে, করছে চুরি ছিনতাই ও মাদক ব্যবসা। এদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। যে কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভাসমান বিক্রেতারা। ধরাকে সরা জ্ঞান মনে না করে একের পর এক অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশালে চুরি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে ভাসমান চা, পান-সিগারেট, সবজি ও মাছ বিক্রেতারা। প্রধান সড়ক ও অলি গলির ভিতরে দোকান খুলে বসে নেপথ্যে বিক্রি করছে মাদক।
সুযোগ পেলে দোকান ও বাড়িতে চুরি এবং দোকান দেয়ার সুবাদে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় থেকে করছে ছিনতাই। এদের বেশির ভাগই নগরীর বস্তিতে বসবাস করে। নগরীর প্রাণ কেন্দ্র বিবির পুকুর পাড়ে দুই একজন চা ও চটপটি ফুচকা বিক্রেতা ব্যবসার পাশাপাশি ইয়াবা ও গাঁজার ব্যবসা করছে। সদর রোড ও তার আশপাশ এলাকায় মাদক ও চোরচক্রের একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে।
এদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন অপরাধের কারণে জেল পর্যন্ত খেটেছে। বের হয়ে পুনরায় একই ব্যবসা করছে। ফুটপাতে দোকান চালিয়ে রাতে চুরি ছিনতাই এবং মাদক ব্যবসা করছে। সম্প্রতি নগরীর একটি বৈদ্যুতিক শো-রুমে চুরির ঘটনা ঘটেছিলো। এছাড়া কাঠপট্টিতেও একই ঘটনা ঘটে। সেখানে ওই চোর চক্রের সদস্যকে আটক করা হয়েছিলো বলে জানান এলাকাবাসী। পাড়া মহল্লার মধ্যে সুযোগ পেলে বাসা বাড়িতে এবং দোকানে এরা চুরি ও রাস্তায় ছিনতাই করে থাকে।
নগরীর নাজিরের পুল থেকে শুরু করে জিলা স্কুল মোড়, ফজলুল হক এভিনিউ থেকে লঞ্চ ঘাট, জেলখানার মোড় থেকে নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড, পুলিশ লাইন্স থেকে আমতলার মোড়, সাগরদী থেকে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড, নগরীর বিভিন্ন অলি গলির ভিতরে অসংখ্য ভাসমান ব্যবসায়ী রয়েছে যারা সুযোগ বুঝে চুরি ছিনতাই করে। এরা জানে নগরীর বেশ কিছু স্পটে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তাই এরা কৌশলে আড়ালে ডেকে নিয়ে ছিনতাই করে। শুধু ছিনতাই নয়, মাদকও বিক্রি করে।
রোজার ঈদের তিন দিন আগে এক তরুণী চা খেতে দাঁড়াস নগরীর বৈদ্যপাড়ার মোড়ে, সেখানে থেকে চা খেয়ে একটু এগিয়ে আসার পরে দেখেন তাকে কে যেন ফলো করছে। কিছু বোঝার আগেই সাথে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায় রিক্সায় থাকা এক যুবক। কাউনিয়া এলাকার এক স্কুল শিক্ষিকার ব্যাগও একই ভাবে ছিনিয়ে নেয়া হয়। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে এরা কেউ প্রশাসনের সাহায্য নেয়নি। এদিকে আমতলার মোড়ে ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
নতুন বাজার, কাউনিয়া, পলাশপুর, সাগরদী, রূপাতলী সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে চুরির ঘটনা ঘটে। ভাটিখানা এলাকার এক বাসিন্দা ঢাকায় বেড়াতে গেলে তার বাসায়ও চুরির ঘটনা ঘটে। তাদের আশপাশ এলাকায় সবজি বিক্রেতা, চা-পান সিগারেটের দোকান রয়েছে। তিনিও পুলিশি ঝামেলা এড়াতে আইনের আশ্রয় নেননি। এ সব দোকান গুলোতে উঠতি বয়সের যুবকদের দেখা যায়। নিয়মিত আড্ডা জমিয়ে ব্যবসার অন্তরালে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে।
এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই ইশারায় মিলছে মাদক। বিবির পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের ২/৩ জন চা বিক্রির আড়ালে গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি করছে। ফজলুল হক এভিনিউ রোডের এবং নগর ভবনের সামনে একটি চক্র রয়েছে যারা সবজি, মাছ, ফল, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির পাশাপাশি মাদক বিক্রি করছে। এ ছাড়াও অধিকাংশ ভাসমান দোকান মালিক নেপথ্যে অপরাধ করে বেড়ায়।
একটি পানের বাক্স এবং একটি টুল ও টেবিল দিয়ে ৫/৭টি চায়ের কাপ-পিরিচ নিয়ে সদর রোডের অথবা অলি গলির মধ্যে ফুটপাতে বসে একেবারে পাক্কা ব্যবসায়ী সেজে বসে করছে চুরি ও মাদক ব্যবসা। সম্প্রতি কয়েকটি চুরির ঘটনার পরে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে প্রশাসন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে থাকলেও এদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ভাসমান বিক্রেতারা অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে।
চোর চক্রের সদস্যদের ভিতরে ভ্যান ও রিক্সা চালক রয়েছে। এদের শনাক্ত করতে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। অতি শীঘ্রই অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান প্রশাসন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রলয় চিসিম দৈনিক আজকের বার্তাকে জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। তবে এরকম কোন ঘটনা ঘটলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব। যারা এই সমস্যার মধ্যে পড়েছেন তাদের উচিত আইনের সাহায্য নেয়া। কারণ পুলিশ জনগণের বন্ধু। জনগণের সেবা করাই আমাদের লক্ষ্য।