আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বরিশালে পিতার বিরুদ্ধে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২২ ১০:২৩ অপরাহ্ণ বরিশালে পিতার বিরুদ্ধে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন
Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জোর করে বাল্যবিয়ে দেয়া ও নির্যাতের অভিযোগে পিতা-মাতাসহ আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে সংবাদ করেছেন ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার কুঞ্জের হাট ইয়াছিনপাড়া ডিগ্রী কলেজের দ্বিতীয় বষের ছাত্রী স্বর্ণা রাণী দে। বৃহষ্পতিবার (১০ মার্চ ) বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটি (বিআরইউ) এর বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্বর্ণা রাণী দে বলেন, প্রতিবেশী অলোক নন্দন দের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক চলছিলো। আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় বিশ্বনাথ এবং জীবন ধর নামের দুজন আমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেন।পরে স্থানীয় কুঞ্জেরহাট হিন্দু যুব সংগঠনের সদস্য তপু, প্রসেঞ্জিৎ এবং চাতক আমাদের বিয়ের জন্য অলোকের কাছে নগদ ২০ লাখ টাকা এবং পাঁচ বিঘা জমি পন হিসেবে দাবি করে। এতে সম্মতি প্রকাশ করেন আমার বাবা সুশান্ত চন্দ্র দে এবং মা মনি রাণী দে।

অলোক এবং তার পরিবার তাদের এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে ১৫ দিনের সময় চেয়ে নেয়। কিন্তু আমার বাবা-মা তাদের সময় না দিয়ে উল্টো অলোককে ৭২ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে জেল খাটানোর হুমকি দেয়। এই ঘটনার দুই মাস পরে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একই গ্রামের দুলাল মাতুব্বরের ছেলে আনুমানিক ৫০ বছর বয়সি রাজিব মাতব্বরের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। রাজিব অন্য কোথাও বিয়ে করতে না পারায় অলোকের সাথে সম্পর্কের কথা জানা সত্যেও সে আমাকে জোর করে বিয়ে করেন। আমি বিয়ে ভাঙার জন্য বিভিন্ন জনের সহযোগিতা চাওয়া সত্যেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এ নিয়ে বিয়ের রাতেই আমার সাথে রাজিব এবং তার পরিবারের ঝগড়া হয়। এরপর বিয়ের পর দিন সকালে আমি রাজিবের বাড়ি থেকে আমার বাবার বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু বাবা-মা, বড়ভাই কর্ণচন্দ্র দে এবং পিসি সীমা রাণী দে আমাকে ঘরে না তুলে জোর জবস্তি আমার সাবেক প্রেমিক অলোকের বাড়িতে দিয়ে আসে এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। শুধু তাই নয়, আমার পিসি এবং বড়ভাই আমাকে অলোকের বাড়িতে বসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অলোককে ফাঁসাতে বলেন। কিন্তু তাদের কথা না শুনে অলোকের বাড়ি থেকে বের হয়ে আমার বাড়ির উদ্দেশে চলে যাই। পথিমধ্যে অলোকের কাকা উত্তম প্রফেসর আমাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে পুনরায় অলোকের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং ঘরের দ্বরা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে বলে। পরে জানতে পেরেছি অলোকদের সাথে তার চাচা উত্তম প্রফেসরদের পারিবারিক বিরোধ চলছে। আমাকে ব্যবহার করে তিনি অলোকদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চাই। তখন সেখান থেকে আমাকে থানা পুলিশের স্মরণাপন্ন হতে বলা হয়। আমি থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা থানার কর্মকর্তাদের অবগত করি। পরে সার্কেল তখনকার সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্কেল এসপি আমার বাড়িতে ফোন করে বাবা-মাকে ডেকে পাঠান। মা আমাকে নিতে আসলেও বাবা আসেনি। সার্কেল এসপি আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার মাকে চাপ দেন। কিন্তু মা আমাকে নিতে রাজি নয়নি। তখন সার্কেল এসপি যখন বাল্য বিয়ে দেয়ার জন্য মাকে আটকের ভয় দেখান তখন তিনি অনিচ্ছা সত্যেও বাড়িতে নিয়ে যান। এমনকি বাড়িতে নিয়ে আমাকে আমার মা-বাবা এবং বড়ভাই প্রতি রাতেই নির্মমভাবে নির্যাতন শুরু করেন। এমনিভাবে চলতে থাকলে দুই মাস পরে অলোক তার চাচাতো ভাইয়ের মৃতদেহ নিয়ে বাড়িতে আসেন। সেটা জানতে পেরে আমার বাবা-মা আমাকে অলোকের বাড়িতে নিয়ে রেখে আসে। কিন্তু স্বজনের মৃত্যু হওয়ায় ধর্মীয় বিধি নিষেধ থাকায় ১৫ দিন পরে সামাজিকভাবে বসে বিষয়টি সামাধানের কথা বলেন অলোকের পরিবার। কিন্তু তাতে রাজি নয় হয়ে উল্টো আমার বাবা-মায়ের নির্দেশে হিন্দু যুব সংগঠনের লোকেরা অলোকের বাড়িতে হামলা-ভাংচুর করে। এমনকি সাংবাদিক ডেকে এনে অলোকের বিরুদ্ধে আমাকে ধর্ষণের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। এমনকি আমাকে দিয়ে জোরপূর্বক অলোকের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ায়। তাছাড়া ধর্ষণ মামলা দিয়ে অলোককে গ্রেফতার করানো হয়। থানায় দুই পরিবারের উপস্থিতিতে অলোক বিয়ের প্রস্তাব দিলে তাতে আমার মা রাজি না হয়ে উল্টো ২০ লাখ টাকা এবং পাঁচ করা জমি দাবি করে। পরে অলোককে তার দুই ভাই আদালত থেকে জেলে থেকে বের করেন। তাছাড়া আমার মা-বাবা আমাকে আদালতের মাধ্যমে সেফ কাস্টরিতে পাঠান। তিনি বলেন, অলোক জামিনে বের হওয়ার পরে আবার আমার বাবা-মা অলোক এবং আমাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ অলোকের কাছে যাওয়ার জন্য আমাকে আমার বাবা-মা নির্মমভাবে নির্যাতন করে। এমনকি আমাকে এবং আমার ছোট বোন শ্রাবন্তী রাণী দে কে টানা পাঁচ দিন বাইরে রাখেন। পরে আমি আমার ছোট বোনকে নিয়ে গ্রামে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করি। তাছাড়া নির্যাতনের ঘটনায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ আমি বাদী হয়ে তাদের হয়রানি থেকে বাঁচতে বাবা-মা এবং হিন্দু সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আসামি করে মোকাম ভোলা বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। আমি মামলা করেও তাদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছি না। উল্টো ছোট বোনকে অপহরণের অভিযোগ তুলে আমার এবং অলোকের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলার হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি বিআরটিসিতে অলোকের চাকরি হলেও ওই মামলার কারণে সে চাকরিতে যোগদান করতে পারছে না। আবার মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিশে কর্মরত অলোকের দুই ভাইকে চাকরিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছে। এসময় তিনি আরও বলেন, প্রশাসন যাতে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আমাদের হয়রানি থেকে রক্ষার পাশাপাশি অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবসা করেন তার দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বর্ণা রাণী দের ছোট বোন শ্রাবন্তী রাণী দে।