নিউজ ডেস্ক:
কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ, প্রাণনাশের হুমকি ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ এক গ্রাহকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ব্রোকার হাউজ।
এদিকে এ অভিযোগ দায়েরের দুদিন পরে ওই গ্রাহকের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয় এআইবিএল কেপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস লিমিটেড নামের শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে যেসব অভিযোগ মনোয়ার হোসেন ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন গ্রাহক তুলেছেন সেসব বিষয়ে আমরা ব্যাখা দিয়েছি। তাদের তোলা ওইসব অভিযোগ বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। আমাদের কোম্পানি একটা নির্দিষ্ট নিয়মে চলে আসছে, বাকি সব গ্রাহক তাতে সন্তুষ্ট হয়েই কোম্পানির সঙ্গে আছেন। সেইসঙ্গে ডিজিটাল যুগে কাউকে ভুল বুঝিয়ে কিছু করার সুযোগও নেই। নেগেটিভ ব্যালেন্স সমন্বয় করার তাগাদা দেওয়ার কারণেই তিনি আমাদের ওপর ক্ষুব্দ হয়েছেন। এছাড়া হাউজে আরও অনেক গ্রাহক রয়েছে তাদের কারো সমস্যা নেই।
এদিকে সাধারণ ডায়েরি করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তারিক বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরিটি করা হয়েছে। যেখানে ঘটনার পুরোপুরি সত্য বিবরণ দেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ ডায়েরি করার পরে আমরা আরও আতঙ্কে রয়েছি ওই গ্রাহকের আচরণে।
সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়েছে, মনোয়ার হোসেন তালুকদার বরিশাল নগরের এআইবিএল কেপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস লিমিটেডের গ্রাহক। শেয়ার লেনদেন করার জন্য গত কয়েকবছর ধরে এ শাখায় যাতায়াত করেন তিনি। তার হিসেবে লেনদেনের কারণে ল্যাজার ব্যালেন্স নেগেটিভ হলে তা সমন্বয় করার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। পাশাপাশি শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে অন্যায় সুবিধা দাবি করেন।
ডায়েরিতে আরও বলা হয়, গত ৩ নভেম্বর গ্রাহক মনোয়ার হোসেন তালুকদারকে পূর্বের নেগেটিভ ব্যালেন্স সমন্বয় করতে পুনরায় তাগাদা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি অফিসের মধ্যে কর্মকর্তাদের মারধরের চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে শাখা ব্যবস্থাপকসহ সবাইকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। পাশাপাশি এখানে ব্যবসা বন্ধ করার হুমকিও দেন। আর তার এ আচরণের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিলেও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বরিশাল শহরে থাকতে না দেওয়ার কথা বলেন। প্রায় প্রতিদিন অফিসে এসে অনুরুপ ভয়ভীতি দেখান।
সবশেষ গত ৩০ নভেম্বর দুপুরে এবং পরবর্তী দিন ১ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ওই গ্রাহক শাখায় এসে কর্মকর্তাদের গালিগালাজ করে, রুমে আটকে রাখেন, চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেন এবং সকল কর্মকর্তাদের মারধরের জন্য তেরে আসেন। যার ভিডিও ভুটেজও রয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, আমরা তাদের কাছে টাকা পাবো। কিন্তু তারা দাবি করছে তারা আমাদের কাছে টাকা পাবে। এসবের কাগজপত্র আনতে গিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে, তবে কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।
যদিও ৬ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তিনি বলেন, অর্থের রক্ষক হয়ে অসতর্কতায় রক্ষণাবেক্ষণ, সার্বিক পর্যবেক্ষণ না থাকায়, দায়িত্ব অবহেলায় এআইবিএল ব্রোকার হাউজ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে আমাদের রক্ষিত অর্থ কেড়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করে ব্রোকার হাউজের অনিয়ম দাবি বাস্তবায়নে, আমরা (গ্রাহকরা) নিঃস্ব অসহায়।
তারা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের অর্থ কর্তন ছাড়া কোনো রকমের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনার চিঠি আমাদের না দিয়ে গোপন রাখেন। প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্য এমন ক্ষতিগ্রস্ত একাউন্ট অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এমনকি আমাদের ক্ষতির-ক্ষতিপুরণ পাওয়ার জন্য পাঠানো চিঠির উত্তর আজও পাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভূক্তভোগী গিয়াস উদ্দিন মাহামুদ, গোলাম গফ্ফার খান, গিয়াস উদ্দিন মামুন, কবির হোসেন, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, কর্মকর্তাদের হুমকির ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।