বার্তা ডেস্ক ॥ প্রায় ৯ বছর বিচার কার্যক্রম চলার পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হলেও গত দুই বছর ধরে বার বার রায়ের তারিখ দেয়া সত্ত্বেও দেয়া হয়নি মডেল তিন্নি হত্যা মামলার রায়। ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে এই মামলার বিচার শুরু হয় ২০১০ সালের ১৪ জুলাই আসামি গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে। মামলা চলাকালীন প্রসিকিউশন অধিকাংশ স্বাক্ষীকেই আদালতে উপস্থিত করে। ২০১৯ সালের ৭ জুলাই মামলার যুক্তিতর্কে সরকারী এ পি পি অ্যাডভোকেট ভবতোষ দাশ কোর্টে বলেন, যদিও এই হত্যাকা-ের স্বপক্ষে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বাক্ষী পাওয়া যায় নাই , তবুও তৎকালীন সময়ে মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির সঙ্গে সাবেক এম পি অভির ঘনিষ্ঠতা থাকায় তাকেই পারিপার্শ্বিক কারণে দায়ী করা যায়। অনুপস্থিত আসামি গোলাম ফারুক অভির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স অ্যাডভোকেট শাহ ইলিয়াস রতন তার আর্গুমেন্টে বলেন, মডেল তিন্নি আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি ছিলেন আত্মহত্যা প্রবন। ইতিপূর্বেও তিনি বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তার বাবা সৈয়দ মাহবুবুল করিমের পুলিশের কাছে দেয়া ১৬১ ধারার জবানবন্দী এবং গৃহকর্মী শেফালী ও বীনার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দীতেও তা সমর্থিত হয়েছে। তারা কেউই বলেননি যে, তিন্নি কে হত্যা করা হয়েছে। তিন্নির ফুপু নার্গিস তাহেরের জবানবন্দিতে জানা যায় যে, তার শ্বশুরবাড়ির নাইমা নামের একটি মেয়ে বুড়িগঙ্গা সেতুর উপর দিয়ে লাফিয়ে পানিতে পড়ে আত্মহত্যার করার বিষয়টি তিন্নি তার ফুপুর কাছ থেকে বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়েছিলেন এবং শুনেছিলেন। তিন্নির মৃতদেহ সেই একই ব্রিজের নীচে পাওয়া গেলে নার্গিস তাহেরের মনে নাইমার আত্মহত্যার মতো তিন্নিও আত্মহত্যা করেছেন বলেই মনে হয়েছে। এমনকি মামলার চার্জশিট প্রদানকারী তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এ এস পি মোজাম্মেল হক কোর্টে তার স্বাক্ষ্যে বলেছেন যে, হত্যাকা-ের স্বপক্ষে ছয় বছরের তদন্তেও কোনো স্বাক্ষী পাওয়া যায়নি।
অ্যাডভোকেট শাহ ইলিয়াস রতন ঘটনার রাতে শ্যামপুর থানায় কর্মরত তিন্নির লাশ উদ্ধারকারী পুলিশের এ এস এই আশরাফের ১৬১ ধারায় রেকর্ডকৃত জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বুড়িগঙ্গা ব্রিজের নীচে পিলার বেদির উপরে একজন অজ্ঞাতনামা মহিলা পড়ে আছে শুনে তিনি সেখানে যান। তখন লোক মুখে শুনতে পারেন যে , একজন অজ্ঞাত লোক চলার পথে বলে যায় যে, ব্রিজ থেকে এক মহিলা নীচে পড়ে গেছে। তার মানে এই যে, তিন্নি ব্রিজ থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনাটি ঐ ব্যক্তি নিজে দেখেছেন। তিন্নিকে হত্যা করে এনে ব্রিজের উপর থেকে কেউ ফেলে দেয় নাই, কিংবা কেউ তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় নাই। অথচ পুলিশের পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তিকে স্বাক্ষী করা হয় নাই।
যদি করা হতো তাহলে ঘটনার পরপরই তিন্নির মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পেতো। আসামি অভিকে নিরবিচ্ছিন্ন হয়রানির শিকার হতে হতো না। কারাগারেও যেতে হতো না অন্যান্য আসামীদেরকে। উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গার চীন মৈত্রী সেতুর নীচ থেকে তিন্নির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১১ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করার পর তিন্নির সাবেক স্বামী শাফাকাত হোসেন পিয়াল, এবায়দুল্লাহ ওরফে স্বপন গাজী, গাজী শরিফউল্লাহ তপন, শফিকুল ইসলাম জুয়েল ও সোমনাথ সাহা বাপ্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে শুধুমাত্র গোলাম ফারুক অভিকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিল করা হয় ২০০৮ সালে।