নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
লকডাউন উপেক্ষা করে বরিশালের বিভিন্ন রুটে নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করে স্পিডবোট চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার এ তথ্য জানিয়েছেন খোদ স্পিডবোট চালকরাই। তবে নৌ-পুলিশের দাবি, বিষয়টি ভিত্তিহীন। কোনো কিছুতে নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করা যায় না। বরিশাল থেকে ভোলা ও মেহেন্দিগঞ্জ রুটে যাত্রী পরিবহন করে থাকে কয়েক শ স্পিডবোট। ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে নৌপথে যাত্রী পারাপারেও। তবে বরিশালের এসব রুটে তিন দিন বন্ধ থাকার পর ফের যাত্রী পরিবহন শুরু করে স্পিডবোটগুলো। নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা স্পিডবোটগুলোতে ভাড়াও নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ। স্পিডবোটের কয়েকজন চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বরিশাল সদর নৌ-থানার পুলিশ প্রতিদিনই টাকা নেয় তাদের কাছ থেকে। জড়িত রয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারাও। তাদের ম্যানেজ করেই চালাতে হয় স্পিডবোট। তারা আরও জানান, নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করেন ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা স্পিডবোট মালিক সমিতির সঙ্গেও যুক্ত। পার্সেন্টেজ নিয়ে তারা ম্যানেজের কাজটি করেন। স্পিডবোট চালক সিদ্দিক বলেন, ‘বরিশাল থেকে ভোলায় নরমালে যাত্রী ভাড়া ২৫০ টাহা হইলেও লকডাউনের মধ্যে অনেক দিক ম্যানেজ কইরা চালাইতে হয়। তাই ভাড়া এহন ৫০০ টাহা নেওয়া হয়। ‘মেইন ভাড়া কিন্তু মোরা ২৫০ টাহাই পাই। আর বাহি ২৫০ টাহা যায় মালিক সমিতির ধারে। হেরা পুলিশসহ অনেক দিক ম্যানেজ করে।’ আলামিন নামে আরেক চালক জানান, বরিশাল থেকে ভোলা আর মেহেন্দিগঞ্জ ছাড়াও চরবাড়িয়া, চরমোনাইসহ বেশ কয়েকটা রুটে বৈধভাবে স্পিডবোট চালানোয় যুক্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। ওগুলার কোনো ঘাট নেই। যেখানে ঝামেলা হয়, সেখান থেকে সরিয়ে আরেক জায়গায় ঘাট দেয়া হয়। পুলিশকে ঠিক রাখতে পারলে চালাতে পারে, না হলে পারে না। তাদের ঘাটটিও এভাবে পুলিশকে টাকা দিয়ে চলছে। তিনি বলেন, ‘আগের চাইতে ভাড়া এহন ডাবল। রোগী লইয়া আইলেও এহন ভাড়া ডাবল। তয় এক্সট্রা যে টাহা নেই মোরা, হেয়া মোগো দেতে হয় মালিক সমিতিরে। হেরা আবার হেইয়া ভাগ কইরা পুলিশ আর আওয়ামী লীগ নেতাসহ ওই বিআইডব্লিউটিএর অফিসার গো দেয়।’ তবে স্পিডবোট মালিক-চালক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলামের দাবি, রোগী ছাড়া তারা স্পিডবোট চালান না। নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড বিষয়টি দেখেই বোট ছাড়ে। পুলিশ বা কাউকে তারা টাকা দেন না। মূলত লাহারহাট থেকে বোট ছেড়ে ভোলা বা মেহেন্দিগঞ্জে যায়। আবার ভোলা, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা থেকে বরিশালে বোট আসে রোগী নিয়ে। বোটচালকদের অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বরিশাল নৌ-সদর থানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক অলোক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নৌ-পুলিশকে কেউ ম্যানেজ করে না। আমাদের নজরদারি রয়েছে। যে কথা বা অভিযোগ উঠেছে, নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে সেগুলো পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখর দাসকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।