Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the rocket domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
যে ৭ লক্ষণেই বুঝবেন হার্টঅ্যাটাক, ব্যবস্থা নিলে বাঁচবে জীবন - আজকের বার্তা
আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

যে ৭ লক্ষণেই বুঝবেন হার্টঅ্যাটাক, ব্যবস্থা নিলে বাঁচবে জীবন


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৪ ৫:৪৩ অপরাহ্ণ যে ৭ লক্ষণেই বুঝবেন হার্টঅ্যাটাক, ব্যবস্থা নিলে বাঁচবে জীবন
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥

হার্ট বা হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য হার্টে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হওয়া দরকার। হার্টে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালি যদি বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে যদি রক্ত হার্টে পৌঁছাতে না পারে, তা হলে হার্টের মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। আর তখনই হয় হার্টঅ্যাটাক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা বিএসএমএমইউয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হিমেল সাহা বলেন, হার্টঅ্যাটাকের কিছু উপসর্গ রয়েছে, যেগুলো দেখা দিলে সময়মতো চিকিৎসা না পেলে যে কারও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

হার্টঅ্যাটাক হওয়ার জন্য আগে থেকেই অসুস্থ থাকাটা জরুরি নয়। বরং আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মানুষেরও হার্টঅ্যাটাক হতে পারে।

হার্টঅ্যাটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে, হাসপাতালে যেতে দেরি হতে পারে। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, ব্যক্তিভেদে হার্টঅ্যাটাকের উপসর্গ ভিন্ন হয়। অনেকের ক্ষেত্রে হার্টঅ্যাটাকের ক্লাসিক বা চিরাচরিত যে উপসর্গ অর্থাৎ বুকে ব্যথা, সেটি নাও থাকতে পারে।

অনেকের ক্ষেত্রে মাত্র একটি উপসর্গ থাকতে পারে, আবার অনেকের ক্ষেত্রে একাধিক উপসর্গও থাকে।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, অনেক সময় হার্টঅ্যাটাকের কোনো ‘সতর্কতামূলক উপসর্গ’ থাকে না। তবে আপনার চিকিৎসক পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন যে, আপনার হার্টঅ্যাটাক হয়েছে। একে বলা হয়, সাইলেন্ট হার্টঅ্যাটাক।

সংস্থাটি সতর্ক করে বলছে যে, হার্টঅ্যাটাকের উপসর্গ যদি আপনার দেখা দেয়, তা হলে দেরি না করে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ এই রোগে জীবন বাঁচাতে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান হতে পারে।

হার্টঅ্যাটাকের কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এসব লক্ষণগুলো হচ্ছে—

১. বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা

বিএসএমএমইউয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হিমেল সাহা বলেন, হার্টঅ্যাটাকের প্রথম উপসর্গই হচ্ছে— বুকে ব্যথা। বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা হবে না। একেবারে বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা হবে। একে ‘সেন্ট্রাল চেস্ট পেইন’ বলে থাকেন চিকিৎসকরা। এই ব্যথা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।

ব্যথার তীব্রতা কেমন হবে তা বর্ণনা করতে গিয়ে মি. সাহা বলেন, মনে হবে যেন বুকের মধ্যে ছুরি চালাচ্ছে বা বুকের মধ্যে হাতি পাড়া দিচ্ছে এবং বুকের হাড় ভেঙে যাচ্ছে।

এটাকে হার্টঅ্যাটাকের একদম আগের ঘটনা বলে বর্ণনা করেন তিনি। সঙ্গে বুক ধড়ফড় বা প্যালপিটিশন থাকবে।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, বুকে তীব্র ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে যদি চরম অস্বস্তিবোধ থাকে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

২. হাত ও ঘাড় ব্যথা

ডা. হিমেল সাহা বলেন, বুকের ব্যথা একসময় বাম হাত ও ঘাড়ের দিকে ছড়িয়ে পড়বে। যাকে বলা হয় ‘ব্যথাটা রেডিয়েট’ করা।

তিনি বলেন, ব্যথা ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়লে মনে হবে যেন গলার মাংসপেশি কেউ চেপে ধরছে।

যাদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের ব্যথা বোঝার ক্ষমতাটা কম থাকে। যার কারণে তাদের অনেক সময় বড় ধরনের হার্টঅ্যাটাক হয়ে গেলেও তারা টের পায় না। যাদের দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আরও বিপদ, বলেন ডা. হিমেল সাহা।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডেভিড নিউবি বলেন, যদি আপনার বাম হাতে ব্যথা নিচের দিকে নামতে থাকে এবং সেই সঙ্গে গলায় চেপে ধরা ভাব থাকে তা হলে সেটি হার্টের সমস্যার লক্ষণ।

এই ব্যথা যদি চলে না যায়, আর এর আগে যদি হার্টের কোনো ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

তার মতে, যদি গলায় কোনো কিছু আটকে থাকার অনুভূতি হয়, সেই সঙ্গে গলা ধরে আসে, কোনো কিছু গিলতে সমস্যা হয়, ব্যথা অনুভূত হয় তা হলে সেটি হার্টঅ্যাটাকের লক্ষণ।

এ ছাড়া যদি চোয়াল ও পিঠেও ব্যথা অনুভব হয়, তা হলে সেটি হার্টঅ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। নারীদের মধ্যে এই উপসর্গ বেশি দেখা দেয়।

৩. পেটে তীব্র ব্যথা

বুকের প্রচণ্ড ব্যথা অনেক সময় পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথাকে অনেকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করতে পারেন।

বিশেষ করে যাদের দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে বেশিরভাগ সময় তারা বুঝতে পারে না যে সেটি আসলে কীসের ব্যথা।

ডা. হিমেল সাহা বলেন, সে ক্ষেত্রে হার্টঅ্যাটাকের ব্যথা পেটে হলে সেটি তীব্র হবে। তার সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া থাকবে।

৪. কাশি ও শ্বাসকষ্ট
যদি হার্টঅ্যাটাকের পর হার্ট ফেইলরের দিকে যায় তা হলে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হবে। হার্ট ফেইলর হলে বা অকেজো হয়ে পড়লে ফুসফুসে পানি আসে। এর কারণে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

হার্টঅ্যাটাকের চিকিৎসা যদি জরুরি ভিত্তিতে না নেওয়া হয়, তা হলে হার্ট আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে, ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তখন সারা দেহে পানি এসে পড়ে।

এর মধ্যে প্রথমেই পানি আসে ফুসফুসে। এর ফলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। এটি হার্টঅ্যাটাকের পর হার্ট ফেইলরের একটা উপসর্গ।

৫. অতিরিক্ত ঘাম

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, শরীর চর্চা করার সময় বা খুব গরমে যদি ঘাম হয় তা হলে সেটা স্বাভাবিক।
কিন্তু যদি বুকব্যথার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড ঘাম হয়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ সেটি হার্টঅ্যাটাকের একটি লক্ষণ।

ডা. হিমেল সাহা বলেন, হার্টঅ্যাটাকের সময় দেহ খুব রেস্টলেস বা অস্থির হয়ে পড়ে, বুকে ব্যথা হয়, তাই তখন অস্বাভাবিক বা প্রচণ্ড রকমের ঘাম হয়।

তার মতে, অনেক সময়ে একজন ব্যক্তির মধ্যে হার্টঅ্যাটাকের একাধিক উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন, বুকে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে ঘাম শুরু হয়, অস্থির লাগে।

৬. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা-সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, দুর্বল অনুভব হওয়া, মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া হার্টঅ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।

ডা. হিমেল সাহা বলেন, বুকের ব্যথা অনেক সময় এতটা তীব্র হতে পারে যে, এতে আক্রান্ত রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এটাও হার্টঅ্যাটাকের লক্ষণ।

হার্টঅ্যাটাক হলে বুকের ব্যথায় অনেকে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

৭. বমি বমি ভাব ও বমি

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, বমি বমি ভাব কিংবা বমি শুরু হলেই যে সেটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ তা নয়। তবে যদি বমির সঙ্গে বুকেও তীব্র ব্যথা ও অস্বস্তি থাকে, তা হলে সেটা হার্টঅ্যাটাকের একটি উপসর্গ হতে পারে।

এ ছাড়া ক্লান্তিও হার্টঅ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, যদি তেমন কোনো কারণ ছাড়াই বমি শুরু হয় এবং কারণ ছাড়াই ক্লান্ত বোধ হয়, সঙ্গে যদি বুকে ব্যথা থাকে, তার মানে এটা হার্টঅ্যাটাকের কারণে হতে পারে।

নারীদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলো বেশি দেখা দেয়।

এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএসএমএমইউয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হিমেল সাহা।

তিনি বলেন, হার্টঅ্যাটাক হয় হার্টের রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা