মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি ॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় জাকির হোসেন নামে এক স্কুল শিক্ষককে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। মাওলানা জাকির হোসেন নলী ভীম চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) এবং নলী চান্দখালী গ্রামের সেকান্দর হাওলাদারের ছেলে।
মামলার বাদী আব্দুল খালেক জোমাদ্দার (৭২) নলী চান্দখালী গ্রামের মৃত চান মিয়া জোমাদ্দারের পুত্র।
জানা গেছে, খালেক জোমাদ্দার স্থানীয় এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্মের মেয়ে ডেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলে।কিছুদিন পর সন্দেহজনক আচরন প্রকাশ পেলে স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু করে।এমনকি ওই প্রবাসীর ছেলে নাঈম সহ পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি নিয়ে বিব্রতবোধ করে। একপর্যায়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম হিসেবে ওই স্কুল শিক্ষক জাকির মাওলানা খালেক জোমাদ্দারকে কিছু উপদেশ প্রদান করে।এতে সে ওই মাওলানার ওপর বিরাগভাজন হয়।
গত ৭ নভেম্বর বিকালে খালেক জোমাদ্দারারের ধর্মের মেয়ে অসুস্থ হয়।খবর পেয়ে খালেক জোমাদ্দার ধর্মের মেয়েকে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করায়। কিন্তু টয়লেটের পাশে রোগীর বেড পড়ায় অসস্তিবোধ করে।এতে রোগীর বাড়ির লোকজন এবং স্কুল শিক্ষক জাকির হোসেন হাসপাতাল গিয়ে বিষয়টি নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলেন।হাসপাতালের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় দাযিত্বরত ডাক্তার ওই রোগীকে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা চালানোর পরামর্শ দেয়।রোগী বাড়িতে যাওয়ার পর খালেক জোমাদ্দার রাগান্বিত হয় এবং হাসপাতাল থেকে রোগী বাড়িতে আসার ব্যাপারে জাকির মাওলানাকে দোষারোপ করে ও সমালোচনা করে।
এরমধ্যে ৭ নভেম্বর এশার নামাজের পর নলী চান্দখালী জসিম কন্ট্রাকটারের বাড়ির সন্নিকটে সালাম জোমাদ্দারের বাড়ির সামনে কার্পিটিংয়ের কাজ চলা রাস্তার ওপর খালেক জোমাদ্দারকে রাতের আধারে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ঘর থেকে ঘটনার সাথে সাথে সালাম জোমাদ্দার ও তার স্ত্রী বের হয়ে টর্চ লাইট মেরে দৌড়িয়ে দুর্বৃত্তদের ধরার চেষ্টা করে।সালাম জোমাদ্দার দৌড়িয়ে উত্তর দিকে একটি কালভার্ট পর্যন্ত দৌড়িয়ে আসে।কিন্তু কাউকে না দেখে ঘটনাস্থলে ফিরে আসে এবং জখমিকে হাসপাতালালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।
এদিকে খালেক জোমাদ্দারের ধর্মের মেয়ে এবং স্থানীয় প্রবাসীর স্ত্রীর চিকিৎসার বিষয়ে খোজ খবর নিতে জাকির মাওলানা এবং প্রবাসীর ছেলে নাঈম (২২) ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই হাসপাতালে ছিল।হাসপাতালে থাকাকালীন তারা খালেক জোমাদ্দারকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে দেখে বিষয়টি জানতে পারে।ঘটনার সময় জাকির মাওলানা ও নাঈম হাসপাতালে থাকলেও তাদেরকে এফআইআর মামলার আসামি করা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
১৪ নভেম্বর খালেক জোমাদ্দার বাদি হয়ে ৩ জনকে আসামি করে মঠবাড়িয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।এ মামলায় জাকির হোসেন ও ধর্ম মেয়ের ছেলে নাঈম ছাড়াও ভাইজোড়া গ্রামের সায়েদ খানের পুত্র মামুন খানকেও আসামি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধর্মের বাপ আর ধর্মের মেয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়েছে। আর এ সম্পর্কের অবনতির জন্য যাদেরকে দোষারোপ করা হয়েছে তাদেরকেই মামলার আসামি করা হয়েছে।
খালেক জোমাদ্দার জানান,আমার ধর্ম মেয়েকে জাকির মাওলানা ধর্মের বোন ডেকেছে। এরপর থেকে আমার ধর্মের মেয়ে আমার কথা শোনে না।আমার ধর্মের মেয়েকে ২ জায়গা থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এনে দিয়েছি প্রতিবসত জমি বন্ধক বাবদ।সে টাকা চাইলে আমার ধর্মের মেয়ের ছেলে নাঈম আমাকে ওই বাড়িতে যেতে নিষেধ করে।আমি ৬ বছর ধরে যে মেয়েকে দেখাশোনা করেছি তার ছেলে যদি আমাকে হুমকি দেয় তা সহ্য করা যায় না।
সালাম জোমাদ্দার জানান,আমার ঘরের সামনে রাস্তার ওপর এ ঘটনা ঘটে।আমার স্ত্রী আহত খালেক জোমাদ্দারকে ধরে রাখে।আর আমি ডাক চিৎকার শুনে টর্চ লাইট নিয়ে রাস্তায় দৌড়িয়ে দুর্বৃত্তদের ধরার চেষ্টা করি।কিন্তু অনেকখানি দৌড়িয়েও কাউকে দেখা যায়নি।
নলী ভীম চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন (বাবুল মাষ্টার) জানান,স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্ধ আনুগত্য না করায় একজন ধর্মীয় শিক্ষককে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়েছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, জাকির হোসেন নামে স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি আমি অবগত নই।