রুপন কর অজিত॥ বিএমপি কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলামের কঠোর হুঁশিয়ারি পরও বরিশাল নগরীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে খোলা পেট্রোল। হুঁশিয়ারির প্রথম দু-একদিন তোড়জোড় দেখা গেলেও এখন তেমন একটা ব্রুক্ষেপ দিচ্ছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা। নিরাপত্তার বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং প্রশাসনে নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুনরায় মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে নগরীর বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। আগে যেটা সামনের টুলে সাজানো দেখা যেতো এখন তা দোকানের মধ্যে আনাচে-কানাচে দেখা যায়।
গতকাল নগরীর গুপ্ত কর্নার মোড়ের একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, অবাধে রাস্তার উপরে আগের মতই বোতল সাজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে খোলা পেট্রোল ও অকটেন। এছাড়া নতুন বাজার পোল, বটতলা, সোনালি আইসক্রিমের মোড় সহ বেশ কিছু স্থানে আগের মতই খোলা পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা ভিন্নতা হচ্ছে যেসকল দোকানে আগে পেট্রোল বা অকটেন বিভিন্ন সাইজের বোতলে ভরে বাইরে প্রদর্শনীর মত করে বিক্রি করা হত এখন তা দোকানে মধ্যে আনাচেকানাচে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। এসকল দোকানে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রেতারা ড্রাম থেকে পেট্রোল বা অকটেন উঠিয়ে বোতলে করে দিচ্ছে। কেউ যদি বোতল নিয়ে যায় সেক্ষেত্রে তাকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দশ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।
কোন বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই অবাধে শুধু একটি ট্রেড লাইসেন্স উপরে দিনের পর দিন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নগরীর কিছু ব্যবসায়ীরা। অথচ আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কেউ খোলা বোতলে তেল বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা বিধান রয়েছে।
জানাযায় এই সকল খোলা পেট্রোল দামে ও মানে কোনটায়ই ঠিক থাকে না। এবিষয় বরিশাল বগুড়া রোডের টিভিএস মোটরসাইকেল শোরুমের সার্ভিসং প্রধান মো. ইমরান হোসেন জানন, খোলা তেল ব্যবহার ইন্জিনের জন্য খুবই খারাপ। দীর্ঘ্য দিন ব্যবহারের ফলে টেঙ্কিতে জং ও কার্বুরেটরে ময়লা ধরা সহ পিস্টনেও সমস্যা হতে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে নগরীর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মাপে তেল কম দেয়ার। জানাযায় বেশি রাত হলে বা পেট্রোল পাম্প দূরে থাকলে লিটার প্রতি ৫-১০ টাকা বেশি রাখেন তারা। প্রতিনিয়ত এসকল অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ঠকিয়ে অধিক মূনফা অর্জন করছে ফলে ক্রেতারা দিনের পর দিন ঠকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ও দফায় দফায় হরতাল-অবরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে চলছে। এসকল অগ্নিসংযোগে বেশির ভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে বোতলের পেট্রোল। গত দুই সপ্তাহে বরিশালে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়। পেট্রোল এর মাধ্যমে বাস দুটিতে অগুন দেয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারনা করা হচ্ছে।
আর এই সকল পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন বরিশাল জেলা সচেতন নাগরীক কমিটির (সনাক) প্রফেসর (অবঃ) শাহ সাজেদা। তিনি জানান, এখন পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। উদাসীনতার কারনে বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটলে তখন করারা কিছু থাকবে না।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিস্ফোরক পরিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক বিমল কুমার মন্ডল জানান, আইন অনুসারে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে না। লাইসেন্স ছাড়া পেট্রোলিয়াম আমদানি, মজুত, পরিবহন, বিতরণ, উৎপাদন, শোধন ও মিশ্রণসহ আইনের কোনো ধারা বা লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘনকারীকে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিভাগের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম পেলে তাদের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া হচ্ছে এবং অফিসে যোগাযোগ করে অনুমোদন নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। আমরা যতই অভিযান পরিচালনা করিনা কেন সাধারণ জনগন সচেতন না হলে এই সমস্যার কোন সমাধান হবে না। নগরীতে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় ২৪ ঘন্টা আমাদের বিভিন্ন ইউনিটের টিম প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া তিন সপ্তাহ আগে পেট্রোল পাম্প মালিকদের সাথে একটি সভায় খোলা তেল বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এসময় তিনি অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, যাদের লাইসেন্স রয়েছে ও নিয়ম অনুযায়ী শুধু যানবাহনের ক্ষেত্রে তেল বিক্রি করবে শুধু তারাই ব্যবসা করতে পারবে। কেউ নিময়বর্হিভূত পেট্রোল বিক্রি করলে তার দোকান বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
উল্লেখ বরিশাল জেলায় ২৯টি (ট-ফরম) পেট্রোল পাম্পের জ্বালানি তেল বিক্রির বৈধ লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে। তাছাড়া জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির (এম-ফরম) পেট্রোলিয়াম বিক্রির বৈধ লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে মাত্র ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের। পাশাপাশি আরও ৪২টি প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় শ্রেণির (ঝ-ফরম) পেট্রোলিয়াম বিক্রির বৈধ লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া (চ-ফরম) এলপিজি সিলিন্ডার ও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির অনুমোদন রয়েছে ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের।