বার্তা ডেস্ক ॥ মেয়াদ শেষের চারদিন পূর্বে বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটার দিকে অব্যাহতি নিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার একমাত্র চাচা নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে একই পরিবারের এই দুই মেয়রের মধ্যে দূরত্ব আবারো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সূত্রমতে, বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিজের পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ায় নবনির্বাচিত মেয়র চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর সাথে নগর ভবন কেন্দ্রীক তাদের দেখা হচ্ছেনা। তবে নিজ নিজ অবস্থান জানান দিতে দুইজনেই আড়ম্বর আয়োজন করেছেন। এরমধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো হচ্ছে পুরো নগরী। অপরদিকে বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বিদায় অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো একাধিক সংগঠন।
সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নেতৃত্বাধীন বর্তমান পরিষদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ১৩ নভেম্বর। পরেরদিন নতুন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার পদ থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করেছেন বিদায়ী মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর নতুন পদায়নকৃত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত যোগদান করেননি। এ ছাড়া সচিব পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শুন্য রয়েছে। ফলে এ চারদিন অভিভাবক শুন্য থাকবে নগর ভবন। তবে এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাছুমা আক্তার রুটিন কাজ চালিয়ে যাবেন।
সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর নগর ভবন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্বের কালীবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনে পায়ে হেঁটে ফিরেছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এ সময় সড়কের দুইপাশে হাজারো নেতাকর্মী ও নগরবাসী সাদিক আব্দুল্লাহকে গণসংবর্ধনা দিয়েছেন। কখনও মুহুমুহু শ্লোগান, আবার কখনও সাদিক আব্দুল্লাহকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পরেন দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে উপস্থিত নগরবাসী। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী কয়েকটি সংগঠন বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেন। নগরীর কালীবাড়ি রোডের সামনে উপস্থিত কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বিদায়ী সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, নবনির্বাচিত সিটি মেয়র আমার চাচা। একজন মেয়রের পক্ষে পুরো নগরীর খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমার চাচাকে (নতুন মেয়র) সবাই সহযোগিতা করবেন।
এসময় উপস্থিত নেতাকর্মী ও নগরবাসী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য শ্লোগান দিতে থাকেন। ওই শ্লোগানের বাখ্যা করে সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে আমি প্রার্থী হবো।
অপরদিকে আগামী ১৪ নভেম্বর নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর অভিষেক অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যুবলীগ নেতা অসীম দেওয়ান জানিয়েছেন, নগর ভবন সংলগ্ন ফজলুল হক অ্যাভিনিউ চত্বরে নতুন মেয়রের দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রায় ২০ হাজার লোকের সমাগম ঘটাতে ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন মেয়রকে বরন করতে নগরীতে সাজ সাজ রব পরেছে। নগরজুড়ে তোড়ন নির্মাণ, ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে নববধুর সাজে সজ্জিত করা হচ্ছে নগরী। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাদের সকল সহযোগি সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একমাত্র চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন হারিয়েছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম পেয়েছিলেন, ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট।