বার্তা ডেস্ক ॥ ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের সদুর চর এলাকার আরসিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ গত ছয় মাস ধরে বন্ধ করে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার ফলে স্থানীয় পথচারীরা যাতায়াত করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ব্রিজটির দুই পাশের গাইড ওয়াল ও ওপরের স্লাব ঢালাই করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেখান থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে চলে গেছেন।
পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন যাতায়াতের জন্য নিজেদের উদ্যোগে সুপারি গাছ দিয়ে মই বানিয়ে ওই ব্রিজ পারাপার হচ্ছেন।
অনেক সময় মই বেয়ে ব্রিজে উঠতে গিয়ে অনেক নিচে পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছেন। দীর্ঘ দিন কাজ না করে ফেলে রাখায় ব্রিজের বের হয়ে থাকা রডেও মরিচা ধরেছে। সরকারি সিডিউল অনুযায়ী চলতি মাসের অক্টোবর মাসে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারের কোনো খবর নেই।
ভোলা সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রণ ব্রিজ পুনর্নির্মাণ-পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইনিয়নের সদুর চর জাঙ্গালিয়ার হাট-নরোনা রোড ভায়া দুলামিয়ার বাড়ি সড়কে ২০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজের সাথে এক হাজার ৫০০মিটার ইটের সলিং রাস্তা ও সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের মাদরাসা বাজার নাজিম উদ্দিন আলম রোড-ইউনিয়ন পরিষদ রোডে ১৮ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ সাথে ৮০০ মিটার ইটের সলিং রাস্তার কাজ শুরু হয়।
তিন কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুইটি ব্রিজ ও দুই হাজার ৩০০ মিটার ইটের সলিং রাস্তার কাজ গত বছরের ১৩ মে শুরু হয়। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ভোলা সদর উপজেলার এলজিইউডির বাস্তবায়নাধীন ব্রিজটি নির্মাণের যৌথভাবে দায়িত্ব পায় ভোলার স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নবারুন ট্রেডার্স লি. ও ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। কাগজে কলমে কাজ দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে হলেও কাজটি করছেন পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম।
সরেজমিনে গত রবিবার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের সদুর চর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভোলা খেয়াঘাট খালের শাখা সদুরচর খালের ওপর দুলামিয়ার বাড়ির উত্তর পাশে একটি নির্মীয়মাণ ব্রিজ। ব্রিজটির দুই পাশের গাইড ওয়াল ও ওপরের স্লাব ঢালাই হলেও ব্রিজে ওঠার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। দুই পাশের গাইড ওয়ালের কাজও পুরোপুরি সম্পূর্ণ করা হয়নি। এখনো লম্বা লম্বা রড বের হয়ে রয়েছে। ওপরের দুই পাশে কোনো রেলিং দেওয়া হয়নি।
শুধু রড বের করে রেখেছে।
স্থানীয় মানুষ ব্রিজের দুই পাশে সুপারি গাছ দিয়ে মই বানিয়ে ব্রিজটি পারাপার হচ্ছে। অনেকর সময় বৃদ্ধ ও নারী-শিশুরা এদিক দিয়ে পারাপারের সময় নিচে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ব্রিজটির পূর্ব পাশে ইটের সলিং রাস্তা রয়েছে। রাস্তার প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিটার জুড়ে বড় গর্ত হয়ে আছে। অনেক জায়গায় ৪-৫ ফুট করে নিচের দিকে দেবে গেছে। তাই সেই রাস্তাটি দিয়েও স্থানীয়দের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। গত ছয় মাস ধরেই তারা ব্রিজ ও রাস্তাটি নিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের মে মাসে ব্রিজটির কাজ শুরু হয়। এর আগে সেখানে একটি সাঁকো ছিল। স্থানীয় চেয়ারম্যান এ ব্রিজটির কাজ করছেন। সাঁকোটি ভেঙে সেখান দিয়ে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হলেও মানুষের যাতায়াতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। গত ৬-৭ মাস ধরে ব্রিজটির কাজ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ না করেই সেখানে থাকা ইট, বালু, পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্রিজটি স্থানীয় চেয়ারম্যান নিজে নির্মাণ করায় তার বিপক্ষে স্থানীয়রা কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। তাই চলাচলে ভোগান্তি হলেও কেউ কিছু বলছে না।
ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সাহাবুদ্দিন জানান, গত ছয় মাস ধরে ব্রিজটি স্লাব ঢালাই করে ফেলে রাখা হয়েছে। ব্রিজটি অনেক উঁচু হওয়ায় স্থানীয়দের চলাচলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত বিঘ্ন ঘটে। তারা নিজেরা ব্রিজের দুই পাশে সুপারি গাছ দিয়ে দুইটি মই বানিয়ে সেটি দিয়ে যাতায়াত শুরু করে। গত ছয় মাস ধরে কোনো ঠিকাদার বা সরকারি কোনো লোক সেখানে যায়নি।
একই এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘এ এলাকার চেয়ারম্যান ব্রিজের কাজ করেছেন। তার মন মতো কাজ করে ব্রিজটি ফেলে রেখেছেন। বর্তমানে দুই পাশের মানুষের যাতায়াতের খুব কষ্ট হচ্ছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে সাঁকো বাদ দিয়ে ব্রিজ করা হয়েছে। যদি ব্রিজের উঠতে সাঁকোই লাগে তাহলে তো আগের সাঁকোই ভাল ছিল।’
স্থানীয় বাসিন্দা সুরমা বেগম জানান, ব্রিজের কাজ শেষ না করে ফেলে রাখায় সেখানকার মানুষের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে ছোট ছোট শিশুরা স্কুলে যেতে কষ্ট করে মই বেয়ে ব্রিজ পার হতে হয়। আবার বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের তো ভোগান্তির শেষ নেই। তাই তারা দ্রুত ব্রিজটি কাজ সম্পূর্ণ করার দাবি জানান।
পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেডের মালিক মো. রনি জানান, কাজটি তাদের লাইসেন্সে অন্য একজন করছেন। তাই কি কারণে কাজটি ফেলে রাখা হয়েছে সেটি তার জানা নেই। তবে তিনি কাজটি যাতে দ্রুত শেষ হয় সে বিষয়টি দেখবেন।
ব্রিজের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলার এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. জমিস উদ্দিন জানান, ব্রিজটি কাজ অনেকটাই শেষ। এখন শুধু দুই পাশের সংযোগ সড়ক ও টুকটাক কিছু কাজ বাকি আছে। বৃষ্টির কারণে সেটি করতে পারেনি ঠিকাদার। ব্রিজের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় প্রকৌশলী চাইলে কাজের মেয়াদ আরো চার মাস বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আগামী সপ্তাহে ব্রিজের কাজ পুনরায় শুরু করা হবে। আশা করি খুব দ্রুত ব্রিজটির কাজ শেষ হবে।
ভোলা সদর উপজেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শিবলু কর্মকার জানান, ইতিমধ্যে ব্রিজটি নিয়ে ঠিকাদারের সাথে তার কথা হয়েছে। ঠিকাদার খুব শিগগিরই বজ্রটির বাকি কাজ শুরু করবেন। তারপরও তিনি নিজে সরেজমিনে গিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে এ প্যাকেজের পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।