বার্তা ডেস্ক ॥ পিরোজপুর জেলার নদীবেষ্টিত উপজেলা কাউখালী প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ছোট-বড় পাঁচটি নদী সন্ধ্যা, কচা, কালীগঙ্গা, চিরাপাড়া (ধানসিড়ি) ও বাংলাদেশের একমাত্র সুইচ খাল গাবখান। প্রাকৃতিকভাবে অনেক সুন্দর উপজেলা হলেও উপজেলার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত উপজেলার বেশির ভাগ গলি-সড়ক সরু ও ভাঙাচোড়া। উপজেলা শহরটি ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকায় শিশু-কিশোরদের জন্য নেই কোনো শিশু পার্ক, বিনোদনের কোন স্থান, স্টেডিয়াম, মার্কেট, আধুনিক ডাক বাংলো। বয়স্কদের জন্য নেই ব্যায়ামাগার বা হাঁটার কোনো খোলা জায়গা। এ এলাকার শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ শিশু-কিশোর সময় কাটানোর জন্য বেছে নিচ্ছে ইন্টারনেট। আসক্ত হচ্ছে মাদকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশু অধিকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ, যা শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও শারীরিক গঠনে অন্যতম ভূমিকা রাখে। খেলার মাঠ ও পার্ক না থাকায় স্বাভাবিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। শিক্ষক হাবিবুল্লাহ বলেন, খেলাধুলা করতে না পারায় একদিকে যেমন শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে তারা ইন্টারনেট ভিত্তিক গেমস ও মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, জেলা পরিষদের জায়গায় প্রায় ২৫ বছর আগে উপজেলা শহরের সমাজসেবা অফিসের পাশে ছোট্ট একটি শিশুপার্ক ছিলো। পরবর্তীতে সেই জায়গায় জেলা পরিষদ থেকে ডিসিআর এনে সেখানে এখন দোকানপাট উঠিয়ে ভাড়া দিচ্ছে। উপজেলায় বিনোদনের জন্য ছিলো ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি সিনেমা হল তাও প্রায় ১৫ বছর হলো বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে কাউখালী শহরের সন্ধ্যা নদীর চরে একটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হলেও ৯বছরেও সেটির কাজও সম্পন্ন হয়নি। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুরের অন্য সব উপজেলার চেয়ে কাউখালী উপজেলায় জেলা পরিষদের জমির পরিমাণ বেশি। কিন্তু উপজেলার অধিকাংশ জমি স্থানীয়রা দখল বা এক বছরের ডিসিআর কেটে ভোগ দখল করছেন। এ কারণে শিশুপার্ক করার জন্য শহরের ভিতরে পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার উপজেলা পর্যায়ে খেলার জন্য মিনি স্টেডিয়াম করার প্রকল্প নিলেও কাউখালী উপজেলায় জায়গা না পাওয়ার কারণে তাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে পিরোজপুরের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালমা রহমান হ্যাপি, কাউখালীতে এসে উত্তর বাজার বলবদোপুর এলাকায় জেলা পরিষদের খাস জমিতে জেলা পরিষদ মার্কেট নির্মাণ করা ও কাউখালী শহরের ভিতরে থানার সামনে জেলা পরিষদের পুকুরের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ বিষয়ে পিরোজপুর বাংলাদেশের একমাত্র মহিলা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাউখালী উপজেলার কৃতী সন্তান সালমা রহমান হ্যাপি বলেন, আমি পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমার এই জেলার সকল উপজেলায় আমার কাছে সমান তারপরও কাউখালী আমার জন্মভূমি আমি শহীদ ওমর ফারুকের বোন এ কারণে কাউখালীর প্রতি আমার একটু টান বেশি ইতোমধ্যে আমি কাউখালীতে কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিন্তু কাউখালী মানুষের আগ্রহ ও সদিচ্ছা থাকতে হবে। কাউখালীতে শিশুদের জন্য বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই এ কারণে কাউখালীতে একটি শিশু পার্ক একান্ত দরকার। এবং আমি ইতোমধ্যে কাউখালীতে একটি জেলা পরিষদ মার্কেট করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এই উপজেলায় দৃশ্যমান উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাই। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক সরকারি জায়গা রয়েছে যা স্থানীয়দের দখলে। সেগুলোও দখলমুক্ত করে শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা। এ কারণে এই উপজেলার সকলের সহযোগিতা চাই।