বার্তা ডেস্ক ॥ ইলিশের নিরাপদ প্রজনন ও মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ১২ অক্টোবর থেকে চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ মৌসুমটি নির্বিঘ্ন করা গেলে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মৎস্য গবেষকদের তথ্যানুযায়ী, আশ্বিনের অমাবস্যা থেকে কার্তিকের পূর্ণিমা পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ বছর নদী ও সমুদ্রে বিচরণরত ইলিশের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়ার উপযুক্ত হয়েছে।
আর মৎস্য বিভাগ বলছে, এ সময়টাতে সব থেকে বেশি মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে দেশের নদ-নদীতে। তবে জব্দ ইলিশ ও মৌসুমি জেলেদের আহরিত ইলিশের আকার ও পরিমাণ দেখে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন জেলেরা।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে সেলিম মাঝি জানান, বেশিরভাগ নিবন্ধিত জেলেই সরকারি নিষেধাজ্ঞা মানছে। যারা মাছ শিকার করছেন তারা শুধু এ সময়টাতেই নদীতে নামে। তারপরও তাদের কাছ থেকে প্রশাসন যে মাছ উদ্ধার করছে, বা এসব জেলেরা যে মাছ নদী থেকে আহরণ করে তীরে নিয়ে আসছে তা দেখে তো সবাই হতাশ। সব মাছের আকারই ছোট এবং পেটেও বেশিরভাগের ডিম নেই।
একই কথা জানিয়েছেন বরিশাল সদরের মৎস্য ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, নদী থেকে লুকিয়ে যে মাছ ধরা হচ্ছে, তাতে বড় আকারের মাছের দেখা তেমন মিলছে না। তাই সন্দেহ থেকে যায় এ প্রজনন মৌসুমে নদীতে কি পরিমাণ ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ এসেছে।
তবে জেলেদের এসব কথা মানতে নারাজ দেশের একমাত্র মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস।
তিনি বলেন, আমাদের যে টার্গেট তাতে খুব কম মা ইলিশও যদি এ প্রধান প্রজনন মৌসুমে ডিম দেয় তাতেই হয়। কারণ একটি বড় আকারের (এক থেকে দেড় কেজি ওজন) ইলিশ সর্বোচ্চ ২০ লাখ ডিম দেয়, আর কম দিলেও দুই লাখের নিচে ডিম দেয় খুব কম ইলিশ।
তবে অব্যাহত অভিযান ও নিবন্ধিত জেলেরা সচেতন হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন দিনে দিনে যেমন বাড়ছে ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে মৎস্য কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র বলেন, দুইশত গ্রাম ওজন হলেও ইলিশ ডিম দেয়। এখানে আকার ছোট-বড় হওয়ার কোনো বিষয় নেই। তবে অভিযানে গিয়ে জব্দ করা মাছের মধ্যে বড় আকারের মাছও আছে আবার ছোট আকারেরও রয়েছে। তবে অবৈধ কারেন্ট জালে ধরা পড়া যে মাছগুলো আমরা দেখছি তার বেশিরভাগই পুরুষ মাছ, যা আকারে একটু ছোটও। এসব মাছ নদীর উপরিভাগ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ধরা পড়ছে, তবে বেশিরভাগ ইলিশ মাছই আরও গভীর থেকে চলাচল করে।
মা ইলিশ তার নিয়মানুযায়ী বৃহত্তর মেঘনাসহ উপকূলীয় নদীগুলোতে ডিম ছাড়ছে জানিয়ে মৎস্য কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র বলেন, এবারের অভিযানে উদ্ধার হওয়া জালগুলোর প্রশস্ততা কম দেখেছি। তাই এগুলো নদীর উপরিভাগে থাকছে এবং খুব অল্প মাছ তাতে ধরা পড়ছে। আর বৈধ জেলেদের জাল সব দিক থেকে বড় হওয়ায়, তাতে যে ধরনের ইলিশ বাধবে এতে (অবৈধ কারেন্ট জাল) তা বাধবে না এটা স্বাভাবিক।
তবে জেলেরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ইলিশের প্রজনন মৌসুমসহ ভরা মৌসুমের সময়কালে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে গত কয়েকবছর ধরে। যখন ইলিশ পাওয়ার কথা তখন না পেয়ে মৌসুমের শেষের দিকে এসেও পাওয়া যাচ্ছে। আবার এ নিষেধাজ্ঞা শেষে বিপুল পরিমাণে ডিমওয়ালা ইলিশের দেখা মিলবে, তাই নিষেধাজ্ঞার সময়গুলোতে আরও গবেষণা করে পরিবর্তন আনা উচিত।
যদিও গত কয়েকবছরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের আহরণ বেড়েছে আবার দেশের মধ্যস্থানের নদীগুলোতে কমেছে। এর কারণ হিসেবে অনাবৃষ্টি, ডুবোচর, নদীতে বিষাক্ত অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি এবং নদীতে ইলিশের খাবার কমে যাওয়াকে দুষছেন গবেষকরা। তবে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ডিম ছাড়ার নিরাপদ সুযোগ করে দেওয়ার তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।