করোনায় জামদানি শিল্পীদের মাথায় হাত!
আজকের বার্তা |
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২১ ২:১৭ অপরাহ্ণ
বার্তা ডেস্ক ॥
বিয়ে-শাদি কিংবা ঈদে বাঙালি রমণীর জামদানি শাড়ি ছাড়া নাকি চলেই না। অনুষ্ঠানে কিংবা পার্বণের সময় জামদানির চাহিদা বেশি থাকায় ওই সময় জামদানি শিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটান। আর ঈদ এগিয়ে আসলে তো কথাই নেই। ঈদের আগে নাওয়া-খাওয়ার সময়টুকু পান না জামদানি শিল্পীরা। কিন্তু এবারের চিত্র ঠিক উল্টো। এবার জামদানি শিল্পীরা বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন। অন্যান্য বছরগুলোতে ভারত, সৌদি, দুবাই, ইন্দোনেশিয়ায় জামদানি শাড়ি রফতানি করা গেলেও এবার লকডাউনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে ১০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়ে দিতে যে শিল্পীরা কষ্ট করছেন, তাদের জন্য নেই সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত জামদানি পল্লীর ১০ হাজার শিল্পীর মাথায় হাত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নোয়াপাড়া জামদানি পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, জামদানি পল্লীতে আগের মতো খুট-খাট শব্দ নেই। নেই কোলাহল। লকডাউনের কারণে গত ২১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে জামদানি কারখানাগুলো। জামদানি বিক্রির হাটও বন্ধ। অথচ প্রতি বছর ঈদ এগিয়ে আসলে নাওয়া-খাওয়া ভুলে কারিগররা কে কত শাড়ি তুলতে পারেন তা-নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা। এবার চিত্র ঠিক এর উল্টো। দেখে মনে হবে যেন এক ভুতুরে নগরী। আবার তাঁতীরা শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন। কেউ লুডু খেলা অথবা আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। তবে কোনো তাঁতী স্বল্প পরিসরে জামদানির কাজ করলেও বিক্রি করতে পারছেন না। তাত বুননের কাজ না থাকায় কয়েকজন তাঁতীকে কাচাঁমালসহ রমজানের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। এছাড়া কিছু তাঁতী কম টাকায় মহাজনের অর্ডারের কাপড় বুনছেন। জামদানি তাঁতী মহসিন বলেন, কিছু কিছু তাঁতীরা মহাজনদের কাছ থেকে অনেক কম টাকায় শাড়ির অর্ডার নিয়ে শাড়ি বুনছেন, যাতে করে ডাল ভাত খেয়ে পরিবার নিয়ে বেচেঁ থাকতে পারি। জামদানি শিল্পীরা বলেন, ঈদে দেশের বাজার ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মিশর, সৌদি আরব, দুবাই ও ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি রফতানি হতো। লকডাউনের কারণে এবার জামদানি রফতানি বন্ধ রয়েছে। ফলে ১০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। তাঁতীরা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে তাঁতীদের তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই। কর্মহীনভাবে দিন কাটছে তাদের। তবে কয়েকজন শাড়ি তৈরি করলেও তা বিক্রি করতে পারছেন না। কথা হয় শিল্পী নুরুল হক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনা আমাগো শেষ কইরা দিছে। এহন লুডু খেইলা সময় কাটাই। সংসার চালানোর মতো টাকা নাই। সরকার হগলতরে প্রণোদনা দিতাছে। অথচ জামদানি শিল্পীরা বাংলাদেশরে বিশ্ব দরবারে তুইলা ধরে। জামদানি শিল্পী গো খবর নেয় না কেউ। শিল্পী ঝর্না বেগম, সাবেকুন, বিউটি আক্তার, আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘাম জড়াইয়া একটা শাড়ি বানাই। এই শাড়ি সারা বিশ্বে চলে। কিন্তু আমাগো দাম নাই। মহাজন এরশাদ, ইসমাঈল, আনোয়ার, মজিবুর বলেন, আগে ঈদ আসলে ভারত, সৌদি, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে জামদানির চাহিদা থাকতো। লকডাউনের কারণে সব শেষ। জামদানি পল্লী বিসিকের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে শতকরা ৯০ ভাগ তাঁতী কর্মহীন হয়ে কষ্টে দিন পার করছে। তাদের প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছি।