আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

আশ্বিনের বর্ষণে বরিশালের জনজীবন বিপন্ন


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩ ৩:৩৩ অপরাহ্ণ আশ্বিনের বর্ষণে বরিশালের জনজীবন বিপন্ন
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥  আষাঢ় শ্রাবনে বৃষ্টির আকালের পরে আশ্বিনের বর্ষণে বরিশাল সহ উপকুলীয় এলাকার স্বাভাবিক জনজীবন অনেকটাই বিপন্ন। খোদ বরিশাল মহানগরীর অনেক রস্তাঘাটও প্লাবিত হয়েছে। এমনকি বছর জুড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাতের পরে শ্রাবনের শেষভাগের অমাবশ্যার প্রবল বর্ষণে আগষ্টে অতিরিক্ত ৮০% বৃষ্টি হলেও চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিন বরিশালে অনেক কম বৃষ্টিপাত লক্ষ করা গেছে । কিন্তু আশ্বিনের শুরু থেকেই গত ৫ দিনে মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণে জনজীবনে ছন্দ পতনের সাথে গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি সহ শীতকালীন আগাম সবজির বাগান অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তবে এখনো বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের তেমন কোন ক্ষতির আশংকা তৈরী হয়নি বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে চলতি খরিপ-২ মৌসুমে ২২ লাখ ৮ হাজার টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রায় ৮.৭০ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যে পৌছতে সক্ষম হয়েছেন কৃষি যোদ্ধাগন। তবে প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্যশষ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এখনো আমন সহ প্রায় সব ফসল আবাদ ও উৎপাদনই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, বঙ্গেরাপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ বিরাজমান রয়েছে। মৌসুমী বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। বরিশাল সহ উপক’লীয় এলাকায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি সহ বজ্রবৃষ্টির কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। সে সাথে কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের আশংকার কথাও বলা হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বরিশালের অদুরে সাগরপাড়ের খেপুপাড়ায়, ৭৪ মিলিমিটার। এসময়ে বরিশালে ৪৭, পটুয়াখালীতে ৫৬ ও ভোলাতে ২৭ মিলি বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত বরিশালে আরো প্রায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আশ্বিনের এ বর্ষনে বুধবারও বরিশাল অঞ্চলের জনজীবনও প্রায় বিপর্যস্ত ছিল। গত কয়েকদিন ধরেই বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে দিনরাত দফায় দফায় বর্ষণে স্বাভবাবিক জনজীবন থমকে যাচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে বৃহস্পতিবার সকালের পারবর্তি ৪৮ ঘন্টা পরে দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা কিছুটা হ্রাস পাবার সম্ভবনার কথাও বলা হয়েছে।
গত মাসের প্রথমভাগে শ্রাবনের অমাবশ্যায় একটি লঘু চাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক বর্ষণের সাথে ফুসে ওঠা সাগর ও উজানের ঢলের পানিতে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের আমন বীজতলা ও রোপা আমন ছাড়াও আধাপাকা আউশের প্রায় পুরোটাই প্লাবিত হয়েছিল। তবে সাগর দ্রুত শান্ত হয়ে উজানের পানি গ্রহন করায় নদ-নদী স্বাভাবিক ধারায় ফিরলেও প্রবল বর্ষণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পুরো সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। জুলাই মাসে যেখানে বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৫৮% কম, সেখানে আগস্টে তা ৮০% বেশী ছিল। গত মাসে বরিশালে স্বাভবাবিক ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে ৭৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ৩১৬ মিলিমিটারের স্থলে ২৮৫ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের কথা বলা হলেও মাসের প্রথম ১০ দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমান ৮৮ মিলিমিটারের মত। আর ১১ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২৪ মিলি বৃষ্টি হলেও ১৬ থেকে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত প্রায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধা পর্যন্ত আরো প্রায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। সাগরপাড়ের খেপুপাড়া সহ উপক’লীয় অন্য এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল আরো বেশী। তবে এ বর্ষণ স্বাভাবিকের খুব বেশী নয় বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবহাওয়া পর্যবেক্ষকগন।
কৃষিবীদগনও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করছেন। এখনো ৮.৭০ লাখ হেক্টরের আমন ঝুকির মুখে না পরলেও বৃষ্টির বাড়াবাড়ি দুঃশ্চিন্তা বাড়াতে পারে। গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি সহ শীকালীন আগাম সবজীর কিছুটা ক্ষতি হলেও বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক ধারায় থাকলে তা পুষিয়ে নেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
তবে বরিশাল অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন বিরূপ প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই প্রতি বছর আউশ,অমন ও বোরা ধান সহ গ্রীষ্ম ও শীতকালীন সবজী ঘরে তুলছেন। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত ভয়াবহ প্রকৃতিক দূর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষকগন গত অর্থ বছরের খরিপ-১,খরিপ-২ ও রবি মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিলেন। গত বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির অভাবের পরে মৌসুম শেষে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে প্রবল বর্ষণে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন ব্যাপক ঝুকির কবলে পরে। তবে সব দূর্যোগ অতিক্রম করে এ অঞ্চলে প্রায় ২২ লাখ টন আমন চাল ঘরে তুলেছিলেন কৃষি যোদ্ধাগন।