রুপন কর অজিত॥ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা।আর এই শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বরিশালের মৃৎশিল্পীরা। এখন যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের।
আগামী ২৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা।
জানা যায়,দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয় মহালয়ার দিন থেকেই।তবে আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে সূচনা এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়াদশমী মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই শারদীয় দুর্গোৎসব।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগরীর প্রতিমা শিল্পীরা কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্যসুন্দর রূপ দিতে রাতভর চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। নিখুঁত হাতের কারুকার্য দিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তৈরি করছে প্রতিমা। পূজার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ছে নগরীর প্রতিমা তৈরি শিল্পীরা। নগরীর বিভিন্ন মন্ডপে ঘুরে দেখা যায়,প্রতিমা তৈরির কারিগরা তাদের নিখুঁত হাতের কারুকার্য বাঁশ, কাঠ, সুতা, খড়, কাদামাটিসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি করছে প্রতিমা। মন্দিরগুলোতে দেবী দুর্গার প্রতিমা ছাড়াও কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীসহ অন্যান্য প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন এই শিল্পীরা।
ঝাউতলা পূজা মন্দিরের কারিগর রতন হালদার বলেন, ‘আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। আমি প্রতিবছর বরিশালে ৩টা প্রতিমা তৈরি করি। তারই ধারাবাহিকতায় এইবার চারটি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। কমিটির লোকজনের চাহিদা অনুযায়ী এবার প্রতিমার আকার ও ডিজাইনে ভিন্নতা এসেছে। বর্তমানে আমরা মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করছি। আর সাত-আটদিন কাজ করলেই মাটির কাজ শেষ হবে। এরপর প্রতিমা শুকানোর জন্য রেখে দেবো। পূজা শুরুর কয়েকদিন আগে রঙের কাজ শেষ করে কমিটির লোকজনের কাছে প্রতিমা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’ পূজোর বাকি অল্প কিছুদিন থাকায় চাপ অনেক বেশি।তিনি আরো বলেন প্রতীমা তৈরির উপকরণের দাম অনেক বেশি।খরচা গিয়ে লাভ থাকে না।
ঝাউতলা পূজা কমিটির সভাপতি বিমল মুখার্জি বলেন,আমাদের মন্দিরে সংস্কারের কাজ চলমান তারপর দূর্গাপূজাও খুবই সন্নিকটে তাই একটু ব্যাস্ত সময় পার করতে হচ্ছে।বাজেটের বিষয় তিনি বলেন, গতবছরে তুলনায় এবছর বাজেট অনেক বাড়াতে হয়েছে।গত বছর যে প্রতিমা ৬৫ হাজারে বানানো গিয়েছে এবছর তা প্রায় ৯০ হাজারের কাছাকাছি লাগবে।তিনি আরো জানান,মন্দির ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রতিবছর আমাদের ভলান্টিয়ার থাকে এবছর ও থাকবে, আমাদের মন্দির ও চলাচলের রাস্তা গুলো সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে।
ঢাকা থেকে প্রতিমা তৈরির করতে এসেছেন বরিশাল সদর রোড জগন্নাথ মন্দিরের কারিগর অনন্ত পাল। এবার তিনি বরিশালে একটি মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন।তিনি বলেন এখন মাটির ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে এর পরে রংয়ের কাজ করা হবে।এদিকে আগামী ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। তাই সময় ঘনিয়ে আসায় কাজের চাপ অনেকটাই বেড়ে গেছে, যার কারণে সারাদিন কাজ করার পরে রাতেও কাজ করতে হচ্ছে। তবে সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় এখন আর তেমন লাভ নেই। বাঁশ, কাঠ, সুতা, খড়ের দাম অনেক বাড়তি, তাই খরচ বেশি পড়ছে।তিনি আরো বলেন,বরিশালবাসীকে যতটা সম্ভব সুন্দর কাজ উপহার দেয়া যায় তারই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।
বরিশাল সদর রোড জগন্নাথ মন্দিরের পূজা কমিটির সভাপতি বিশু ঘোষ বলেন,নিত্যপন্যের দাম আকাশচুম্বী। প্রতিটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে আমাদের বাজেট বাড়াতে হয়েছে।মন্দির ও দর্শনার্থীর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সর্বক্ষন সিসি টিভি পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে।তিনি আরো বলেন,পূজোর দিন ঘনিয়ে আসায় আমার মন্দির কমিটির সকলেই ব্যস্ত সময় পার করছি।
নতুন বাজার নিবাসী নীলিমা রানী বলেন,দূর্গা পূজা আমাদের সবচেয়ে বড় পূজা।চার দিন ব্যাপী পূজোর প্রতিদিনই ঘুরতে যাই ও মজা করি।সবকিছু ঠিক থাকলে এবছর ও ঘুরবো মজা করবো।
কালীবাড়ি নিবাসী সুদীপ্ত জানান,আমাদের বরিশাল নগরীতে প্রতি বছর ধুমধামে ও শান্তিপূর্ন ভাবে দূর্গাপূজো অনুষ্ঠিত হয়।প্রতিবছর ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত আত্নীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব নিয়ে পূজো দেখে বেশ মজায় কাটাই।এবছর ও এরকমটা ইচ্ছে।
বরিশাল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মানিক মুখার্জি জাননা, গত বছর বরিশাল জেলায় মোট ৬০২ টি মন্দিরে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে বরিশাল মহানগরীতে ৪৫ টি মান্দিরে পূজো অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। তবে এবছর এখনো তালিকা সম্পূর্ণ হয় নি ২-১ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ হলে বলা যাবে জেলায় মোট কতটি মন্দিরে পূজো অনুষ্ঠিত হবে।তিনি বলেন আগামী ২৯ তারিখ কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সামনের পদক্ষেপ গ্রহন ও কার্যক্রম শুরু করবো। মন্দির নিরাপত্তার বিষয় তিনি বলেন,প্রতিটি মন্দির কমিটিকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে যেনো কোন মন্দিরে অরক্ষিত ভাবে প্রতিমা তৈরি না করা হয়।
বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তমাল মালাকার বলেন,প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জমকালো আয়োজনের নগরীর ৪৫ টি পূজা মন্দিরে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।এজন্য প্রতিটি মন্দির কমিটিকে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে।এছাড়া প্রতি বছরই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি মন্দিরে আলাদা ভলান্টিয়ার থাকে। আমরা সে ব্যাপারে তদারকি করছি।আশা করা যায় কোন রকম কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না।