দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী: গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মহানায়ক বেগম জিয়া
-
সংকটাপন্ন অবস্থায় সিসিইউতে, কমে গেছে কিডনির কার্যকারিতা, রোগমুক্তি কামনায় দেশবাসী
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন লড়াকু, আপোসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। গত রোববার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি এখন হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা চলছে।
গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে তার জীবনের এই রূপান্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য উদাহরণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী । দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহন করে কখনো হারেননি। ছিলেন তিন বাবেরর প্রধানমন্ত্রী ও দুই বারের বিরোধী দলীয় নেত্রী। ২০০৪ সালে ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাবান নারী নেতৃত্বের তালিকায় বেগম খালেদা জিয়া ১৪তম হন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় খালেদা জিয়া ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তখন তিনি অবস্থান করছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। এ হত্যাকাণ্ডে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিএনপি। দলের হাল কে ধরবে, তা নিয়ে দোলাচল, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পার্টির ভেতরে তখন দেখা দেয় গভীর কোন্দল।
রাষ্ট্রপতি জিয়ার জীবদ্দশায় খালেদা জিয়াকে খুব একটা প্রকাশ্যে দেখা যেত না। তাই তার রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত অনেককে চমকে দিয়েছিল।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন। যেটা ছিল তার রাজনৈতিক জীবনে প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ। একই বছরের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন।
১৯৮৩ সালের মার্চে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর এপ্রিলের শুরুতে বিএনপির এক বর্ধিত সভায় গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন এবং সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন।
১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সে সময় তিনি দলের নেতৃত্ব না নিলে বিএনপি গভীর সংকটে পড়ে যেত।
এরশাদবিরোধী আন্দোলন জোরদার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় তার পক্ষে। আন্দোলনের সময় তাকে একাধিকবার আটক করা হলেও তিনি রাজপথ ছাড়েননি।
এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাজনীতিতে আসার মাত্র এক দশকের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার সুযোগ পান তিনি।
তৃতীয় মেয়াদ শেষে আসে আলোচিত-সমালোচিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার। সেই সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুটি দুর্নীতি মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই বছরের বেশি সময় তিনি কারাগারে ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা শর্তসাপেক্ষে স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়, পরে প্রতি ছয় মাসে সেই মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরের দিন, ৬ আগস্ট খালেদা জিয়া নির্বাহী আদেশে মুক্ত হন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি রাতে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বড় ছেলে তারেক রহমানের কাছে। প্রায় চার মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি দেশে ফেরত আসেন।
সম্প্রতি ফুসফুসে সংক্রমণজনিত শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া এবং তার সঙ্গে দীর্ঘদিনের কিডনি, লিভার, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসের জটিলতায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। একটি রোগের চিকিৎসা দিতে গেলে অন্যটির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ায় তার শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্ত দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আমেরিকার জনস হপকিনস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য আবার বিদেশে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁর শারীরিক অবস্থা বিমান যাত্রার ধকল সামলানোর জন্য কতটা সক্ষম, তার ওপর নির্ভর করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চিকিৎসকেরা আগামী এক-দুই দিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দেখবেন। সম্ভব হলে তাঁকে আবার লন্ডন ক্লিনিকে নেওয়া হবে, যেখানে তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল। সেটি সম্ভব না হলে কম দূরত্বের সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করা হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার মতো তাঁর শারীরিক অবস্থা নেই।
তার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশবাসী।

আপনার মতামত লিখুন
Array